মর্মান্তিক!
কৃষিকাজের পাশাপাশি ঘরের পাশে পুকুরে রুই, কাতলা ও তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে সংসার চালাতেন আবদুল হাই রাঢ়ী (৫৫)। সেই মাছগুলো ছটফট করে মারা যেতে দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি তিনি। নেমে পড়েন পুকুরে। নামা মাত্রই তিনি বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে পানিতে পড়ে যান। তাঁকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যান দুই মেয়ে দিনা (২২) ও মহুয়া মৌ (২০)। পানিতে নামলে তাঁরাও বিদু্যৎস্পৃষ্ট হন। এরপর ওই তিনজনকে উদ্ধার করতে ভগ্নিপতি মো. ইব্রাহিম সিকদার (৬০) পুকুরে নামেন। তাঁরও একই অবস্থা হয়। পরে তাঁদের চারজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালিশুরী ইউনিয়নের ধলাপাড়া গ্রামের রাঢ়ীবাড়িতে গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। একই পরিবারের চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
খবর পেয়ে গতকাল বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ফয়েজ আহম্মেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান ও বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ জ ম মাসুদুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ওই সময় জেলা প্রশাসকের পক্ষে ইউএনও ক্ষতিগ্রস্ত দুই পরিবারকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দেন।
প্রতিবেশী মো. নাঈম মল্লিক বলেন, ওই বাড়ির পুকুরের পাশ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন চলে গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়বৃষ্টির সময় বিদ্যুতের খুঁটি থেকে একটি তার ছিঁড়ে পুকুরে পড়ে পানি বিদ্যুতায়িত হয়।
বাড়ির লোকজন, এলাকাবাসী ও পুলিশের ভাষ্যমতে, পুকুরের পানি এভাবে বিদ্যুতায়িত হয়ে থাকার বিষয়টি আবদুল হাইয়ের পরিবারের সদস্যরা টের পাননি। পরে আঁচ করতে পেরে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী পল্লী বিদ্যুতের কালিশুরী এরিয়া অফিসে ফোন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়। এরপর চারজনকে পানি থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাউফল জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘রাতে ঝড়বৃষ্টির কারণে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে পুকুরে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পুকুরে পড়ে থাকার বিষয়টি কেউ আমাদের জানায়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওসি আ জ ম মাসুদুজ্জামান বলেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।