ক্ষমতাধরের তালিকায় চিন পিং-পুতিনের পেছনে ট্রাম্প-ম্যার্কেল, আছেন মোদি-সালমানও
সারা বিশ্বে এখন সাড়ে সাত শ কোটি মানুষের বাস। তাদের মধ্য থেকে চলতি বছর বিশ্বের ৭৫ জন প্রভাবশালী নারী ও পুরুষকে বেছে নিয়ে ক্ষমতাধরদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস ম্যাগাজিন। বিশ্বে তাঁদের প্রভাব, সম্পদ ও ক্ষমতার প্রভাববলয়ের নিরিখে ফোর্বস-এর তালিকায় জায়গা দেওয়া হয় এই ৭৫ জনকে।
২০০৯ সাল থেকে বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করে আসছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। শেষ তালিকা প্রকাশ হয়েছিল ২০১৬ সালে। তবে এবারের এ তালিকা অনলাইনে প্রকাশ হলেও ছাপা আকারে প্রকাশ হবে এ মাসের শেষ দিনে।
এবারের ফোর্বস তালিকায় প্রথমে উঠে এসেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, আমাজনের প্রধান জেফ বেজোস, পোপ ফ্রান্সিস, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তবে এবারের তালিকা কিছুটা চমকে ভরা। কারণ বিশ্বের সেরা ক্ষমতাধরদের তালিকার সেরা দশে আবার জায়গা করে নিয়ে বিশ্বের বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সেরা দশে ছিলেন। এবার আবারও সেরা দশে নানা কারণে কিছুটা কোণঠাসায় থাকা মোদি। এ ছাড়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থাকা সত্ত্বেও শীর্ষে আছেন চিনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।
তালিকায় সবার ওপরে বা এক নম্বরে আছেন চীনের প্রেসিডেন্ট ও দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং। এই প্রথমবারের মতো ক্ষমতাধরদের তালিকার শীর্ষে উঠে এলেন এ বছরের মার্চে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পাওয়া চিন পিং। চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় বসা পুতিন আছেন তালিকার দুই নম্বরে। গেলবারের দ্বিতীয় স্থান থেকে তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। চলতি বছরের ক্ষমতাধরদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। পোপ ফ্রান্সিস ষষ্ঠ, বিল গেটস সপ্তমে, সৌদি যুবরাজ মুহম্মদ বিন সালমান আটে। ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৮—এ তিন বছর ধরে ফোর্বস-এর বিচারে ক্ষমতাধরদের তালিকায় নবম স্থান ধরে রেখেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ এ বছর আছেন শীর্ষ দশে।
সি চিন পিং
এ বছরের মার্চে নতুন করে আজীবনের জন্য চীনের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হয়েছেন সি চিন পিং। ২০১২ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৩ সালের রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর থেকেই চীনে নিজের কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করেন সি। চীনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে যাওয়া সি চিন পিং ফোর্বস-এর বিচারে এবার প্রথম স্থানে উঠে এসেছেন। কয়েক বছর ধরে এ তালিকার শীর্ষে থাকতেন পুতিন।
ভ্লাদিমির পুতিন
গত কয়েক বছর বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে প্রথমে থাকার পর এ বছর চিন পিংয়ের কাছে হেরে ফোর্বস-এর সবচেয়ে ক্ষমতাধরদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে নেমে গিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও তিনি কয়েক দিন আগে চতুর্থবারের মতো জয়ী হয়ে আগামী ছয় বছরের জন্য রাশিয়ার শাসনভার হাতে নিয়েছেন। ১৮ বছর ধরে রাশিয়ার মসনদে তিনি আছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প
ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে নিজ দেশকে সরিয়ে নেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প এবারও প্রথম স্থানে পৌঁছাতে পারেননি। তবে তিনি উঠে এসেছেন তিন নম্বরে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি শপথ নেন।
আঙ্গেলা ম্যার্কেল
জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে আবার আসীন হয়েছেন ম্যার্কেল। তিনিই জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর। অনেকবারই ক্ষমতাধরদের শীর্ষে উঠে এসেছে তাঁর নাম। তবে গতবারের তুলনায় ট্রাম্পের চেয়ে এক ধাপ পিছিয়ে গেছেন। ক্ষমতাধরদের তালিকায় ট্রাম্পের পরেই তিনি। নারীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র দশে আছেন।
জেফ বেজোস
জেফ বেজোস বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তকমা পেয়েছেন কিছুদিন আগেই। এবার তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধরদের তালিকাতেও আছেন। ম্যার্কেলের পরই তিনি আছেন। প্রথমবারের মতো প্রথম পাঁচে জায়গা করে নিয়েছেন বেজোস।
পোপ ফ্রান্সিস
পোপ ফ্রান্সিসের বাণী সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সব সময়ই বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথম দিকে থাকেন তিনি। এবার পোপ ফোর্বস-এর বিচারে ক্ষমতাধরদের তালিকায় আছেন ছয়ে। ২০১৩ সাল থেকে পরপর তিন বছর বিশ্বের চতুর্থ ক্ষমতাধর ব্যক্তির তালিকায় ছিলেন তিনি।
বিল গেটস
মাইক্রোসফটের বিল গেটস একটানা কয়েক বছর বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন। ফোর্বস-এর করা তালিকায় এবার ক্ষমতাধরদের মধ্যে সাতে আছেন বিল গেটস।
যুবরাজ সালমান
সৌদি প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ধনীদের তালিকায় অনেক ওপরে আছেন। সৌদি আরবকে নানা সংস্কারের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার এই কারিগর ক্ষমতাধরদের তালিকায়ও প্রথম দশে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি আছেন অষ্টম স্থানে।
নরেন্দ্র মোদি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের তালিকায় এ বছর প্রথম দশে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি আছেন নয়ে। গত বছর নবম স্থানে থাকা নিয়ে নিয়ে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে তাঁর জোর টক্কর হয়েছিল। এবার মোদি এগিয়ে গেছেন। জাকারবার্গ সেরা দশে এবার নেই।
ল্যারি পেজ
এ বছর ফোর্বস-এর বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধরদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ। তিনি রয়েছেন শীর্ষ দশের শেষ স্থানে। মোট সম্পদের দিক থেকেও তিনি ফোর্বস-এর প্রথম দশে আছেন।