দিতি আর নেই

অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতি আর নেই। দীর্ঘ রোগভোগের পর গতকাল রোববার বিকেলে মারা গেছেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দিতি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রথম আলোকে দিতির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের চিফ কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট শাগুফা আনোয়ার। দিতি দীর্ঘদিন ধরে নিউরোসার্জারি পরামর্শক সৈয়দ সায়ীদ আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
মস্তিষ্কের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ায় গত বছরের ২৫ জুলাই থেকে ভারতের চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন দিতি। মাঝে কিছুটা সুস্থ হলে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় তাঁকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গত বছরের নভেম্বরে আবারও একই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এ বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার পরপরই তাঁকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে।
গতকাল রাতে গুলশানের আজাদ মসজিদে দিতির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। চলচ্চিত্রজগতের অনেকেই জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। আজ সোমবার সকালে দিতির মরদেহ তাঁর গুলশানের বাসায় নেওয়া হবে। এরপর এফডিসিতে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। শিল্পীর জন্মস্থান সোনারগাঁয়ে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে।
১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দিতির জন্ম। ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন তিনি। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ডাক দিয়ে যাই। যদিও ছবিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল আজমল হুদার আমিই ওস্তাদ।
৩১ বছরের অভিনয়জীবনে দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন দিতি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে হীরামতি, দুই জীবন, ভাই বন্ধু, স্নেহের প্রতিদান, শেষ উপহার, কাল সকালে, মেঘের কোলে রোদ, নয় নম্বর বিপদ সংকেত ইত্যাদি। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ধূমকেতু ছবিটি।
সিনেমার পাশাপাশি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন দিতি। নাটক পরিচালনাও করেছেন। এ ছাড়া রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন। অভিনয়ের বাইরে মাঝেমধ্যে গান গাইতেও দেখা গেছে তাঁকে। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একক গানের অ্যালবামও। বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেলও হন তিনি।
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন দিতি। তাঁদের সংসারে লামিয়া ও দীপ্ত নামের দুই সন্তান রয়েছে। সোহেল চৌধুরীর মৃত্যুর পর চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন দিতি, সে বিয়ে টেকেনি।
দিতির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী দিতির অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁর মৃত্যু দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের একটি অপূরণীয় ক্ষতি। শেখ হাসিনা দিতির রুহের মাগফেরাত কামনা করে তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া প্রয়াত অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তথ্যসচিব মরতুজা আহমদ ও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি।