ওয়েব প্রযোজনায় সেন্সরশিপ জরুরি
>নিজেকে হিট–ফ্লপের ঊর্ধ্বে রাখতে চান সাইফ আলী খান। তাই বক্স অফিসে আয়ের ওঠানামা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামান না। নতুন নতুন চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরতে চান তিনি। এবার নবদীপ সিং পরিচালিত লাল কাপ্তান ছবিতে তিনি এক সন্ন্যাসীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় বলিউড নায়ক সাইফ আলী খানের মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। বলিউডের এই নবাবের সঙ্গে নবাবি আড্ডায় ছিল তৈমুর, সারা, কারিনা এবং তাঁর ছবির কথা।
দেবারতি ভট্টাচার্য: লাল কাপ্তান ছবির লুক আপনার ওমকারা ছবির চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই চরিত্রের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
সাইফ আলী খান: এই লুকের জন্য আমাকে অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়েছে, যা খুবই কঠিন ছিল। প্রতিদিন মাথায় ভারী পরচুলা পরতে হতো, যার ওজন দুই কেজির মতো। এত ভারী পরচুলা পরে ঘাড় ঘোরাতে পারতাম না। তার ওপর চড়া রোদের মধ্যে তলোয়ার নিয়ে ঘোড়সওয়ারি করতে হতো। ভোর পাঁচটায় উঠে মেকআপে বসতাম। টানা দুই ঘণ্টা লাগত তৈরি হতে। এরপর হোটেল থেকে লোকেশনে পৌঁছাতে লাগত আরও দুই ঘণ্টা। ভারী পোশাক পরে মরুভূমিতে শুটিং করা ছিল খুবই ক্লান্তিকর। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রোজ শুটিং হতো। লাঞ্চের বিরতি পেলেই মনে হতো পরচুলাটা খুলে ফেলি। কিন্তু নিজেকে বোঝাতাম যে পর্দায় আমাকে স্বাভাবিক দেখানোর জন্য এই লুকটাকে আপন করে নিতে হবে। আমাকে এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে।
দেবারতি: এই ছবির জন্য নতুন কিছু কি শিখতে হয়েছে? ঘোড়সওয়ারি তো আপনি আগেই জানতেন।
সাইফ: হ্যাঁ, তা জানতাম। তবে এই ছবির জন্য আলাদা করে আবার ঘোড়সওয়ারি শিখতে হয়েছে। কারণ, লাল কাপ্তান ছবিতে ঘোড়াকে নিয়ে দৌড়ানো নয়, ধীরগতিতে হাঁটাতে হয়েছে। ঘোড়াকে দুই পা আগে আবার দুই পা পেছনে কী করে নিয়ে যাওয়া লাগে, সেটা শিখতে হয়েছে। এসব করা কিন্তু মোটেও সহজ নয়।
দেবারতি: আপনার এই লুক দেখে তৈমুরের কী প্রতিক্রিয়া ছিল?
সাইফ: ছবির শেষ পর্যায়ের শুটিং মুম্বাইতে ছিল। সে সময় তৈমুর সেটে এসেছিল। তবে ও আমাকে দেখে ভয় পায়নি, বরং আমাকে এই সাজে দেখে ও মুচকি হাসি হেসেছিল। সারাও আমার লুক পছন্দ করেছে। সারা বলেছিল, এই সাজে নাকি আমাকে কুল দেখিয়েছে।
দেবারতি: ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই সারা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এ ব্যাপারে কী বলবেন।
সাইফ: এখন পর্যন্ত সারার বলিউড সফর দেখে আমি ওকে নিয়ে গর্বিত। ও খুব পরিশ্রমী, কাজের প্রতি একাগ্র। সারার সবচেয়ে ভালো গুণ হলো, ও খুব বিনয়ী। তাই সবাই ওকে খুব ভালোবাসে। সারার এই গুণ ওকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দেবারতি: আপনার ছেলে ইব্রাহিমের কি সিনেমায় আসার কোনো পরিকল্পনা আছে?
সাইফ: হাবভাব দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
দেবারতি: কারিনার রেডিও শোতে আপনি অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন। কেমন লাগল আরজে কারিনার সঙ্গে সময় কাটিয়ে?
সাইফ: খুবই মজার ছিল অভিজ্ঞতা। রেডিও শো হলেও ক্যামেরাই বেশি ছিল। তাই টিভি শোর মতো লাগছিল। আমি নিজেও সঞ্চালনার কাজ উপভোগ করি। যদি কখনো সুযোগ পাই, আমিও রেডিও শো করতে চাই। খুবই মজার কাজ এটা।
দেবারতি: কখনো কি ছবি পরিচালনার কথা ভেবেছেন?
সাইফ: একদমই না। পরিচালককে সবচেয়ে বেশি কাজ করতে হয়। যখন কোনো পরিচালক ছবি পরিচালনা করেন, তখন নিজের পরিবার–বন্ধুবান্ধবকে সময় দিতে পারেন না। উল্টো দিকে তাঁরাই সবচেয়ে কম পারিশ্রমিক পান। একটা ছবির জন্য চার বছর দেওয়ার পর তাঁদের এই প্রাপ্তি। এমনটা আমি কখনো নিজের সঙ্গে ঘটতে দেখতে পারব না।
দেবারতি: সেক্রেড গেমস টু দর্শক সেভাবে পছন্দ করেননি। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
সাইফ: হ্যাঁ, সেক্রেড গেমস-এর প্রথম মৌসুম সবাই পছন্দ করেছিল। এর দ্বিতীয় মৌসুম সেই অর্থে দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আমি ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য কাজ করতে ভালোবাসি। খুবই সৃজনশীল আবহ। এখন আমাজনের ওয়েব শো ‘তাণ্ডব’-এ কাজ করছি আমি। রাজনীতির ওপর এই ওয়েব শো তৈরি।
দেবারতি: ওয়েব প্রযোজনায় সেন্সরের দাবি তুলছে অনেকে। আপনার কী অভিমত?
সাইফ: আমাজন আর নেটফ্লিক্স খুব দায়িত্বের সঙ্গে ওয়েব কনটেন্ট বানায়। কিন্তু ছোট ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্মগুলো যা পায়, তা–ই ওয়েবে দেখায়। তাই ওয়েব প্রযোজনায় সেন্সরশিপ খুব জরুরি। কারণ, ওটিটি সেবা শিশুরাও গ্রহণ করে থাকে। এই কনটেন্টগুলো তাদেরও নাগালের মধ্যে।