অ্যাভাটার বনাম অ্যাভেঞ্জার্স
হঠাৎ ক্যাপ্টেন আমেরিকার পাশ দিয়ে একটি তির ছুটে গেল। আধা ইঞ্চির জন্য মাথায় লাগেনি। নয়তো আজই প্রাণটা বিসর্জন দিতে হতো ক্যাপ্টেনের। গাছের পেছন থেকে মাথা উঁচু করে সামনের অবস্থা দেখার চেষ্টা করল সে। পুরো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এই এলাকা। মাথার ওপর দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে ড্রাগনের মতো পাখির দল। অদ্ভুত সব প্রাণী দৌড়ে বেড়াচ্ছে তার পাশ দিয়ে।
আসলে যুদ্ধ চলছে না’ভিদের সঙ্গে। ওই যে অ্যাভাটার মুভির নীল রঙের লম্বা লম্বা প্রাণী, যাদের দেখতে অনেকটা মানুষের মতোই লাগে—সেই না’ভিদের সঙ্গে। তারা প্যানডোরা গ্রহে বাস করে, সেখানে আছে অদ্ভুত সব জন্তু আর গাছপালা। এদের সঙ্গেই মারামারি হচ্ছে অ্যাভেঞ্জারদের। তুমুল যুদ্ধ। ডক্টর স্ট্রেঞ্জ, ব্ল্যাক উইডো, হক–আই, হাল্ক থেকে শুরু করে সবাই আছে। অ্যাভাটারের যোদ্ধারা পুরোদমে লড়ে যাচ্ছে। অ্যাভেঞ্জাররাও কম যায় না। তারাও পাল্টা জবাব দিচ্ছে। কিন্তু মনে হচ্ছে অ্যাভেঞ্জারদের শক্তি একটু কমে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যুদ্ধটা কী নিয়ে? অ্যাভেঞ্জার্স বা অ্যাভাটারের না’ভি—দুই দলই তো শান্তিপ্রিয়।
আসলে যুদ্ধ হচ্ছে বক্স অফিসের শীর্ষস্থান দখল নিয়ে। অ্যাভাটার ছবিটি সর্বকালের সর্বোচ্চ আয় করে এক দশক ধরে বসে আছে বক্স অফিসের মাথায়। তারা সেই স্থান ছাড়তে নারাজ। কিন্তু মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের সর্বশেষ ছবি অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম সেই স্থান দখল করতে মরিয়া।
২০০৯ সালে মুক্তি পায় অ্যাভাটার। বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনি অ্যাভাটার পরিচালনা করেন জেমস ক্যামেরন। ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের এই চলচ্চিত্র আয় করে ২ দশমিক ৭৮৮ বিলিয়ন ডলার। মূল চরিত্রগুলোয় অভিনয় করেন স্যাম ওর্থিংটন, জোয়ি সালডানা, স্টিফেন ল্যাং, মিচেলে রড্রিগেজ, জোয়েল ডেভিড মুর ও জিওভান্নি রিবিসি। জিতে নেয় অনেক অ্যাওয়ার্ড আর বক্স অফিসের শীর্ষস্থান।
এ বছরের ২৬ এপ্রিল মুক্তি পায় অ্যাভেঞ্জার্স সিরিজের চতুর্থ ও শেষ ছবি অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম, যা নিয়ে জল্পনা–কল্পনার শেষ ছিল না দর্শকমহলে। অনেকে তো হলে গিয়ে তিন-চারবার দেখেছেন একই ছবি। সবাই ধরেই নিয়েছিল এবার অ্যাভাটার–এর রাজত্ব শেষ। এন্ডগেমই শীর্ষে উঠে যাবে। কিন্তু তীরে এসে প্রায় তরি ডুবে গেছে এন্ডগেম–এর। প্রায় ২ দশমিক ৭৪৪ বিলিয়ন ডলার আয়ের পর থেমেই গেছে এন্ডগেম–এর যাত্রা। ৪০ মিলিয়নের পাহাড় পেরিয়ে উঠতে বেশ হাঁপিয়ে উঠেছে এন্ডগেম। সে জন্যই আবার আসছে এন্ডগেম। কিন্তু কীভাবে?
বলা যায় অ্যাভাটারকে টেক্কা দিতেই নতুন কিছু অপ্রকাশিত দৃশ্যসহ আবার এন্ডগেম মুক্তির পরিকল্পনা করছেন মার্ভেল–কর্তারা। এন্ডগেম ছবির বর্তমান ব্যাপ্তি ১৮২ মিনিটের, যা এবার বেড়ে ১৮৮ মিনিট করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ ৬ মিনিটের ফুটেজ নতুনভাবে যোগ হবে। এই ৬ মিনিট যোগ করা হবে ছবির শেষ অংশে। যেন মূল গল্পে কোনোরকম পরিবর্তন না হয়। আরও থাকবে কিছু ফেলে দেওয়া (ডিলিটেড) দৃশ্য, একটু অভ্যর্থনা ও কিছু চমক! জানা গেছে, ২৮ জুনই এন্ডগেম ১৮২ থেকে ১৮৬ মিনিটের হতে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেই বর্ধিত অংশ দেখা যাবে কি না, এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি এখন।
ভক্তদের মধ্যে অনেকেই হয়তো এন্ডগেম–এর অতিরিক্ত ৬ মিনিট নিয়ে বেশ উত্তেজিত। তবে দুঃখের ব্যাপার এই যে এর আগে অ্যাভাটার বা টাইটানিক-এর বক্স অফিসে শীর্ষস্থান দখল করার জন্য কিন্তু এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে হয়নি। পুনরায় মুক্তির পর এন্ডগেম হয়তো অ্যাভাটারকে ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু সেই মুকুট পরার যোগ্যতা কতটুকু তাদের আছে, তা আপনারাই বিবেচনা করবেন! তবে এটা নিশ্চিত বলা যায়, দর্শকদের অ্যাভাটার ২–এর প্রতিও আগ্রহ বেড়ে যাবে শতগুণে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর জেমস ক্যামেরনের অ্যাভাটার ২–এর কাছে এন্ডগেম নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।