নজরুল সমাধির সামনে ১ ঘণ্টা
বৃষ্টিভেজা সকালে সহস্র অনুরাগী ভিড় করেছিল কবির সমাধির পাশে। তাদের দেওয়া ফুলে ফুলে সকালেই ছেয়ে যায় কবির সমাধি। আজ শনিবার সকালে এভাবেই শুরু কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন আয়োজন।
নানা অঙ্গনের মানুষ এসেছিলেন কবির সমাধির সামনে। কেউ ফুল দিয়ে ফিরে যান নিজ গন্তব্যে, কেউ সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে সময় কাটান। আলোচনা করেন কবির কাজ নিয়ে। গুনগুন করে গান গাইতেও দেখা যায় কাউকে কাউকে।
সমাধিতে ফুল দিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন ছাইদুর রহমান। পেশায় চাকরিজীবী। বললেন, বাংলাদেশের মাটিতেই কবির অনেক মহান সৃষ্টি আছে। জীবনের শেষ দিনগুলো আমাদের এ দেশের মাটিতে কাটিয়েছিলেন। এ দেশের মানুষও ভালোবেসে তাঁকে আপন করে নেয়। আমার নিজের কাছে এই জায়গায় আসলে অন্য রকম ভালো লাগে। ভেতর থেকে কেমন যেন টান অনুভব করি। তাই অন্যরা চলে গেলেও দাঁড়িয়ে আছি।
সকাল থেকেই সর্বস্তরের মানুষের ভিড় জমতে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে অবস্থিত নজরুল সমাধিতে। প্রথমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জমান। এরপর সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে।
আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। শ্রদ্ধা নিবেদন করে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম সারা জীবন অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের জন্য তার লেখনী কবিতা, গল্পের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সব সময় কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ছিলেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করেছিলেন তিনি।
বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল সালাম বলেন, অত্যাচার-নিপীড়ন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন প্রতি মুহূর্তে কাজী নজরুল ইসলামকে মনে পড়ে। তিনি শুধু দেশের কবি নন, সারা বিশ্বের কবি। তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়ের কবি নন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাউসার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষে সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, জাসদ, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, নজরুল ইনস্টিটিউট, নজরুল একাডেমি, মানিকগঞ্জ সমিতি-ঢাকা, ঢাবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্র, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু কবিতা পরিষদ, ঢাবির বিভিন্ন হলের ছাত্র সংসদ, নজরুলসংগীত শিল্পী সংসদ, ঋষিজ।
সকালে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোভাযাত্রা নিয়ে কবির সমাধির সামনে আসেন। কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ফুল দেওয়ার পর সেখানে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনের বিষয় ছিল ‘নজরুল চেতনায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। এতে উপাচার্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার, সম্প্রীতির, সাম্যের ও মানবতার কবি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তিনি সব সময় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ও অসাম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদী ছিলেন। তাঁর লেখা গান, কবিতা, গল্প ও উপন্যাস আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছে।
এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, সহ-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন এবং ঢাবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল।
অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান। বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন। অনুষ্ঠানে নজরুলের গান শোনান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক মহসিনা আক্তার খানম (লীনা তাপসী), খায়রুল আনাম শাকিলসহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।