
কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়া যেকোনো চলচ্চিত্রনির্মাতার জন্যই একটা বড় সুযোগ। বছরজুড়ে নির্মিত হওয়া সবচেয়ে ভালো চলচ্চিত্রগুলো এই উৎসবে বিভিন্ন শাখায় নির্বাচিত হয়। তা ছাড়া দেখানো হয় দারুণ কিছু ক্ল্যাসিক সিনেমা। চলচ্চিত্রের ভাষা বোঝাপড়ার জন্য সবচেয়ে জরুরি ভালো ভালো সিনেমা দেখা। ফলে একজন চলচ্চিত্রনির্মাতার জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে টানা কয়েক দিন ভালো সিনেমা দেখতে পারা তাঁর নিজের নির্মাণযাত্রায় আরেকটি খুঁটি গেড়ে দেয়। এত বড় উৎসবের নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে দৃষ্টিও বড় হয়ে ওঠে। এ বছর মেরিল-প্রথম আলো ফেইম ফ্যাক্টরিতে আমার শর্টফিল্ম নায়িকার এক রাত প্রথম স্থান পাওয়ায় আমার সুযোগ ঘটেছে চলমান ৭২ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের চলচ্চিত্র বাজার মার্শে দ্যু ফিল্মের ইন্ডাস্ট্রি ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়ার। এর মধ্য দিয়ে উৎসবে সিনেমা দেখা ও নানা অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার সুযোগও ঘটছে।
ফ্রান্সের কান শহরে কান চলচ্চিত্র উৎসব এবং কান চলচ্চিত্র বাজার মার্শে দ্যু ফিল্মে বিভিন্ন দেশ থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক, পরিবেশক, এজেন্টসহ যাঁরাই আসেন তাঁদের বেশির ভাগই নিস কুৎ দাজোখ এয়ারপোর্ট ধরেই আসেন। কারণ, এয়ারপোর্ট থেকে উৎসবস্থলে বাস বা ট্যাক্সি করে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ৩০-৪০ মিনিট। এয়ারপোর্টেই বাস কাউন্টার আছে। ওয়ানওয়ে বাসের টিকিট ২২ ইউরো। ফলে ট্যুরিস্ট বা নির্মাতাদের জন্য এই বাস সার্ভিসটাই আরামদায়ক হয়। ২২০ নম্বর বাসে ওঠার আগেই পরিচয় হয়ে গেল রুয়ান্ডা থেকে আসা একজন চলচ্চিত্রনির্মাতার সঙ্গে। বাসে যেতে যেতে কথা হলো যার যার দেশের চলচ্চিত্র বাজার, বছরে সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা, হল, পরিবেশনা ইত্যাদি নিয়ে।
এক পাশে সমুদ্র রেখে উঁচু-নিচু কিছুটা পাহাড়ি নিস শহর পাড়ি দিয়ে চলে এলাম কান শহরে, সিনেমার শহরে। বাস থেকে নামতেই বাংলাদেশি নির্মাতা, প্রযোজক জসিম আহমেদ আমাকে স্বাগত জানালেন। তিনি এবং ভারতীয় নির্মাতা ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী মার্শে দ্যু ফিল্মে এসেছেন তাঁদের নতুন যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে।
ফেস্টিভ্যাল ও মার্কেটে যাঁরা অংশ নেন, তাঁরা তাঁদের পরিচয় ও নিবন্ধনের ধরন অনুযায়ী একেকজন একেক রকম ব্যাজ পান। কোনো ব্যাজে বেশি জায়গায় অংশ নেওয়া যায়, কোনো ব্যাজে কম।
তরুণ নির্মাতাদের জন্য আরেকটা ভালো বিষয় হলো, বিভিন্ন পেশাদারি বক্তৃতামালা। আমি প্রথম যে বক্তৃতা শুনতে গেলাম, তা মার্শে দ্যু ফিল্মের ডক কর্নারে। সৃজনশীল তথ্যচিত্র নিয়ে একটা সেশনে সার্বিয়া এবং মিসরের দুজন নির্মাতা বর্তমান সময়ে তথ্যচিত্রের বিষয়, নির্মাণ, বিপণন, পরিবেশন, সিনেমা নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া, সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন ও বাস্তবতা নিয়ে কথা বললেন। তাঁরা দুজনই নারী হওয়ায় উঠে এল বাড়তি কিছু প্রসঙ্গ, বাড়তি সংকটের কথা। এমনকি সম্ভাবনার কথাও।
সালে দেবুসি বা দেবুসি থিয়েটারে সিনেমা দেখতে এসে দেখি একাধিক লাইন। ব্যাজ আলাদা হওয়ার কারণে লাইনগুলো আলাদা হয়ে গেল। সব সিনেমার জন্য একাধিক লাইন থাকে, তা-ও নয়। প্রথমে ভুল লাইনে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু সময় নষ্ট করে আবার আমার ব্যাজের লাইনে দাঁড়ালাম। কিন্তু আমার পর্যন্ত লাইনের দর্শকেরা ভেতরে ঢোকার আগেই হল পূর্ণ হয়ে গেল। ফলে বিফল মনোরথে পরের সিনেমা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা