সব বলে দেবেন ডেমি মুর
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হারপার কলিন্স গত বৃহস্পতিবার একটা দারুণ খবর দিয়েছে। হলিউডের অভিনেত্রী ডেমি মুর শিগগিরই ‘ইনসাইড আউট’ নামে স্মৃতিকথা বের করতে যাচ্ছেন। নিজের উত্থান, পতন, সংগ্রাম বা বিতর্ক—এই সবকিছু নিয়েই দ্বিধাহীনভাবে বলবেন তিনি। এ ছাড়া এখানে মাদকাসক্তির সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ নিয়েও অকপটে জানাবেন এই হলিউড তারকা।
এ পর্যন্ত ডেমি মুর তিনবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। প্রথম ১৯৮০ সালে গায়ক ফ্রেডি মুরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৮৫ সালে ভক্তদের হৃদয় ভেঙে আলাদা হয়ে যান এই তারকা দম্পতি। ১৯৮৭ সালে হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা ব্রুস উইলিসের সঙ্গে পরিচয়ের মাত্র দু’মাস পরই তাঁকে বিয়ে করেন মুর। ব্রুস উইলিস ও ডেমি মুর দম্পতির তিনটি কন্যাসন্তান রয়েছে। রুমার (৩০), স্কাউট (২৭) এবং তালুলাহ (২৫)। সেই সম্পর্ক ১৯৯৮ সালে গিয়ে শেষ হয়, আনুষ্ঠানিক বিবাহবিচ্ছেদ হয় ২০০০ সালে। কিন্তু এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে সত্যি হলো রবীন্দ্রনাথের সেই বাক্য, ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ।’ সব চুকেবুকে যাওয়ার পরও তাঁদের মধ্যে ‘গভীর বন্ধুত্ব’ বিদ্যমান। এরপর ২০০৩ সালে আরেক প্রখ্যাত হলিউড অভিনেতা অ্যাস্টন কুচারকে হৃদয় দিয়ে বসেন। আগেরবার তো মাত্র দু’মাসের পরিচয়ে বিয়ে করেছেন, এবার তাই সময় নিলেন দুই বছর। অ্যাস্টন কুচারকে বিয়ের দুই বছর পর ডেমি মুর তাঁর পদবি পরিবর্তন করে ‘কুচার’ করেন। যদিও ‘মুর’ নামেই চলচ্চিত্রজগতে তিনি পরিচিত। ২০০৫ সালের সেই বিয়ে শেষ হয় ২০১৩ সালে এসে। স্মৃতিকথামূলক বইয়ে উঠে আসবে এই তিন ‘হাই প্রোফাইল’ বিয়ে নিয়ে মুরের অনুভূতি আর স্বীকারোক্তি।
আর দশজনের মতো একটা স্বাভাবিক শৈশব ছিল না ডেমি মুরের। সোনার চামচ তো দূরের কথা, বরং ভয়াবহ সংকটে কেটেছে মুরের ছেলেবেলা। পারিবারিক, শারীরিক, পিতৃ পরিচয়—সব ধরনের জটিলতা ছিল সেখানে। তাঁর বাড়ির পরিবেশ ছিল খুবই কঠিন আর এলোমেলো। তাঁর আসল বাবা চার্লস হার্মন বিয়ের দুই মাসের মধ্যে তাঁর মা ভার্জিনিয়া কিংকে ছেড়ে চলে যান। মুর তখন মায়ের পেটে। মুরের জন্ম পরিচয়পত্রে রয়েছে সৎ বাবা ড্যানি গাইনেসের নাম। ড্যানি গাইনেস ১৯৮০ সালে আত্মহত্যা করেন। মুরের বাবা-মা দুজনই ছিলেন মদ্যপ। বাবা-মায়ের বীভৎস ঝগড়া আর মারামারি দেখে মুরের শৈশব কেটেছে। শৈশবে মুর ছিলেন ট্যারা। সেটি ঠিক করার জন্য তিনি একটি আই প্যাঁচ পরতেন। দুটো অপারেশনের পর তা ঠিক হয়। কিডনির সমস্যাও ছিল। ছিল হেটেরোক্রমিয়া। অর্থাৎ তাঁর একটি চোখের মণি সবুজ আর অন্যটি হ্যাজেল (বাদামি ও সবুজের মিশ্রণ)।
১৯৯১ সালের আগস্টে ‘মোর ডেমি মুর’ শিরোনামে ডেমি মুরের নগ্ন ছবি দিয়ে ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’ পত্রিকার প্রচ্ছদ করা হয়। মুর যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং তাঁর গর্ভে তাঁর কন্যা স্কাউট লারু, তখন বিখ্যাত ফটোগ্রাফার অ্যানি ওই ছবিটি তোলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ‘হলিউড-বিরোধী, চাকচিক্য-বিরোধী’ মনোভাব প্রকাশ করা এবং মাতৃত্বের শক্তির জয়গান করা। কিন্তু ওই ছবি ব্যাপক সমালোচিত হয় ও বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়।
হারপার কলিন্সের প্রকাশক জেনিফার বার্থের মতে, ইনসাইড আউট প্রথমত এবং প্রধানত একজন সংগ্রামী নারীর গল্প। যিনি বারবার আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন। আমার মনে হয়ে পাঠকেরা এই বই পড়ে অবাক হবেন। এই বই তাঁদের প্রভাবিত করবে। হারপার কলিন্স এই বইটি প্রকাশ করতে যাচ্ছে বলে খুবই গর্বিত।
এই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর ‘ইনসাইড আউট’ প্রকাশিত হবে।
মুর যে এবারই প্রথম তাঁর অতীতের বিষয়ে সত্য বলবেন, তা নয়। এর আগেও গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন পাওয়া এই অভিনেত্রী ‘উইম্যান অব দি অ্যাওয়ার্ড’ নেওয়ার সময় নিজের ভয়াবহ অতীত নিয়ে মুখ খুলেছেন। পুরস্কার হাতে প্রথম বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের সবার জীবনে কিছু মুহূর্ত আসে। সেটা আমাদের বলে দেয়, আমরা কে, আমরা কোথায় যাব। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে কিছু একটা করার জন্য, কিছু একটা হওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। নিজেকে কষ্ট দিয়েছি। সাফল্য আমাকে খুশি করতে পারেনি। আমার কাছে এর কোনো মূল্য ছিল না। নিজেকে কষ্ট দিয়ে দিয়ে একটা ভয়াবহ সংকট তৈরি করে ফেলেছিলাম। এখনো জানি না, কেন ওরকম করেছি। হয়তো ওরকম করতে ভালো লাগত।’ এভাবেই প্রথম নিজের অন্ধকার দিনগুলোর কথা বলেছিলেন মুর।
সবকিছু ধ্বংস হওয়ার আগেই আবার নিজেকে গড়তে শুরু করেন মুর। ‘জীবন কোনো সোজা, সরল পথ নয়। আমার মনে হয়, একপর্যায়ে গিয়ে সব মানুষেরই জীবনের প্রতি অবহেলা আর অনীহা চলে আসে। আমি এ সময় আমার একজন শিক্ষকের কাছে ছুটে যাই। সব খুলে বলি। তিনি বলেছিলেন, তুমি কখনোই ততটা ভালো করতে পারবে না, যতটা ভালো করলে তুমি সুখী হবে। কিন্তু তুমি নিজের ভেতরে যা আছে, সেটুকুর সদ্ব্যবহার করতে পারো। মাপামাপির দাঁড়িপাল্লা এবার তুলে রাখো। খুশি থাকো।’
এভাবেই মুর সেদিন নিজের অভিশপ্ত দিনগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার গল্প বলেছিলেন।