বাবার 'যৌন হয়রানি' নিয়ে মুখ খুললেন প্যারিস

বাবা মাইকেল জ্যাকসন যৌন হয়রানি করেছিলেন, এমনটা ছোটবেলা থেকেই শুনেছেন প্যারিস জ্যাকসন। কিন্তু তা নিয়ে কখনো কোনো মন্তব্য করেননি। বাবা নেই, তাই তাঁকে নিয়ে যেন কোনো বিতর্ক না হয়, তা-ই চেয়েছিলেন। এবার আর থেমে থাকতে পারলেন না। বাবার এক ভক্তের জন্য দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙেছেন এই পপ সম্রাটের মেয়ে। মাইকেল জ্যাকসনকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। নাম ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’। এর পরিচালক ও প্রযোজক ড্যান রিড। যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর আর যুক্তরাষ্ট্রের এইচবিও। মাইকেল জ্যাকসনের কাছে যৌন হয়রানির শিকার দুই শিশুর তরুণ বয়সের ভাষ্যের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্রটি।
২৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সানডান্স চলচ্চিত্র উৎসবে ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ তথ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছে। এরপর তথ্যচিত্রটির তীব্র সমালোচনা করেছে মাইকেল জ্যাকসনের পরিবার। এক বিবৃতিতে এই পরিবার থেকে বলা হয়েছে, ‘সারা জীবন এ রকম নোংরা আক্রমণ মোকাবিলা করতে হয়েছে মাইকেল জ্যাকসনকে। এমনকি এখনো করতে হচ্ছে।’ সেই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘তথ্যচিত্রে ওয়েড রবসন ও জিমি সেফচাককে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে জ্যাকসনের ঘনিষ্ঠ অন্য সবাই সেখানে রীতিমতো উপেক্ষিত। জ্যাকসন কখনোই শিশুদের সঙ্গে বাজে আচরণ করতেন না। বরং সব সময় তিনি তাদের আদর করতেন।’

মাইকেল জ্যাকসনের পরিবার এই তথ্যচিত্রকে কুরুচিপূর্ণ আর তথ্যচিত্রের দুই কথককে মিথ্যাবাদী উল্লেখ করে সেই বিবৃতিতে বলেছে, ‘ওয়েড রবসন ও জিমি সেফচাক মিথ্যাবাদী। জ্যাকসন জীবিত থাকাকালে তাঁরা বলেছিলেন, তিনি তাঁদের কোনো যৌন হয়রানি করেননি। জ্যাকসনের মৃত্যুর পর আবার তাঁরা এসব দাবি করতে শুরু করেছেন। জ্যাকসনের খ্যাতিকে নোংরাভাবে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
এসব ঘটনার পর টুইটারে প্যারিস জ্যাকসনকে নীরবতা ভাঙার আহ্বান জানিয়ে মাইকেল জ্যাকসনের এক ভক্ত লিখেছেন, ‘এই তথ্যচিত্রের মধ্য দিয়ে আপনার বাবার সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে, তাঁকে নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু তাতে কার কী আসে যায়!’
টুইটটি ২০ বছর বয়সী মডেল ও অভিনয়শিল্পী প্যারিস জ্যাকসনের চোখ এড়ায়নি। তিনি নীরবতা ভাঙার প্রয়োজন উপলব্ধি করেন। টুইটারে সেই ভক্তকে লিখেছেন, ‘তাহলে ভালোবাসা নয়, শান্তি নয়, আপনার কাছে কেবল এই নেতিবাচক বার্তা গেল? সব ছাড়িয়ে ট্যাবলয়েড আর মিথ্যা বড় হলো?’

প্যারিসের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সেই ভক্ত টুইটারে আবার লিখেছেন, ‘না, তাঁরা মাইকেল জ্যাকসনের নামকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চায়, তাঁর সব গান থামিয়ে দিতে চায়। এগুলো তাহলে আপনার কাছে কোনো বিষয়ই না! ভুলে যাবেন না, আপনার বাবা এই গানের জন্যই মারা গেছেন।’
জবাবে প্যারিস জ্যাকসন লিখেছেন, ‘তারা সত্যিই এটি করেছে? আমি তো মনে করি, তাঁরা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছে। হ্যাঁ, তাঁদের নির্মাণে ভিন্নতা ছিল। আপনি কি আসলেই বিশ্বাস করছেন, এভাবে মাইকেল জ্যাকসনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা সম্ভব? সেটা কি আদৌ হতে পারে? প্লিজ, শান্ত হন এবং শান্তিতে থাকুন।’
মাইকেল জ্যাকসনের কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার এক কিশোরের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৩ সালে পুলিশ তাঁর ক্যালিফোর্নিয়ার খামারবাড়ি ‘নেভারল্যান্ড’-এ তল্লাশি চালিয়েছিল। সেই খামারবাড়ির নামানুসারে তথ্যচিত্রের নামকরণ করা হয়েছে। তবে জ্যাকসনের মৃত্যুর এত দিন পর মীমাংসিত একটি বিষয়কে আবারও সামনে টেনে আনার জন্য তথ্যচিত্রটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

শোনা যায়, মাইকেল জ্যাকসন তাঁর জীবদ্দশায় ৭ ও ১০ বছর বয়সী দুই বালককে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। ওই বালকেরা এখন ত্রিশের কোটায়। তাঁদের ভাষ্যের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে ওই তথ্যচিত্র। এ দুজনের একজন ওয়েড রবসন এখন একজন কোরিওগ্রাফার। শিল্পী ব্রিটনি স্পিয়ার্সসহ নামী শিল্পীদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি।