কলকাতায় এসে সিনেমা দেখব না, তা হয়? এখানকার সাধারণ একটি প্রেক্ষাগৃহে কলকাতার একটি বাংলা ছবি দেখা উচিত। কিন্তু কোনটি? ‘রসগোল্লা’ দেখুন, পরামর্শ দিলেন কলকাতার মেয়ে আনিতা চৌধুরী। সাংবাদিকতায় পিএইচডি করছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি এসেছিলেন বাংলা উৎসবে চিরকুটের গান শুনবেন বলে। গুগলে সার্চ করে সিনেমাটির প্রদর্শনীর সময় বের করে দিলেন শনিবার বিকেলে সদ্য পরিচিতা আনিতা।
গতকাল শনিবার নজরুল মঞ্চে বাংলা উৎসবের দ্বিতীয় দিনের শেষ পরিবেশনা ছিল বাংলাদেশের ব্যান্ড চিরকুটের। কেউ ভাবতেই পারেনি যে ম্রিয়মাণ উৎসবকে চাঙা করে তুলবে বাংলাদেশের এই ব্যান্ড। কথায়, সুরে, গানে আর বাদ্যের ঝংকারে কলকাতাবাসীকে নাচিয়ে ছেড়েছে চিরকুট। ইমন চৌধুরীর গিটারে হঠাৎই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বেজে উঠলে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ান সবাই। এরপর শিহরণ জাগানো বাদ্যে ‘ধনধান্য পুষ্পেভরা’, ‘মরে যাব’, ‘আহারে জীবন’, ‘জাদুর শহর’, ‘কানামাছি’, ‘না বুঝি দুনিয়া’ গানগুলো দিয়ে দলটি দর্শকদের নিয়ে যায় রোমাঞ্চের তুঙ্গে। ব্যান্ডের নামাঙ্কিত টি–শার্ট উপহার হিসেবে এনেছিল চিরকুট। মঞ্চ থেকে দর্শকদের সেসব উপহার দেন চিরকুটের প্রধান শিল্পী শারমিন সুলতানা সুমি। আর নিজেদের জন্য শুভকামনা প্রত্যাশা করে বলেন, ‘প্রথমবার এই মঞ্চে গাইতে এসে আপনাদের প্রতিক্রিয়ায় অনুপ্রাণিত হলাম।’
এই দিন নতুন প্রতিভা হিসেবে মঞ্চে ওঠেন কলকাতার আকাশ ভট্টাচার্য ও অঙ্কিতা বসু, বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমান ও ডলি মণ্ডল। লোকগান শোনান কলকাতার গৌতম দাস বাউল ও বাংলাদেশের চন্দনা মজুমদার। রবীন্দ্রসংগীত লাইসা আহমদ লিসা, জয়তী চক্রবর্তী, অদিতি মহসিন ও বুলবুল ইসলাম। নজরুলসংগীত শোনান খায়রুল আনাম শাকিল ও ইন্দ্রানী সেন এবং পুরোনো দিনের গান শোনান ইফফাত আরা দেওয়ান। এদিন ছিল ভারতের শিল্পী জয়তীর জন্মদিন। তাঁর হাতে স্মারক আর গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দেন বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ থেকে ভারতের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কলকাতা শহরে যাওয়ার পথে চোখে পড়ে বিরাট এক বিলবোর্ড। কাজী নজরুল ইসলাম সরণির মুখে সেই বিলবোর্ডে বাংলাদেশের জয়া আহসান ও কলকাতার আবীর চট্টোপাধ্যায়। ‘বিজয়া’ ছবির বিজ্ঞাপন। কলকাতায় শিগগির মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। বিলবোর্ডে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়কেও দেখা যাচ্ছিল। ‘বিসর্জন’-এর সাফল্যের পর নতুন বছরে এটি কলকাতাবাসীর জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। কলকাতা শহরে ঢুকতেই চোখে পড়ে ‘বিজয়া’র আরও কিছু বিলবোর্ড ও পোস্টার। কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে বসে জয়া আহসানের এ সিনেমাটি দেখা হবে কি না, ভেবে বিহ্বল হয়ে পড়ি। কারণ, কলকাতা এখন সাংস্কৃতিক উৎসবে ম–ম করছে।
বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনের জনপ্রিয় দুই শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন ও রুনা লায়লা, দুজনেই এখন কলকাতায়। গতকাল এখানে শুরু হয়েছে যোধপুর পার্ক উৎসব। এ উৎসবে গান করার কথা রুনা লায়লার। গাড়িতে উঠলেই ভেতরে বাজতে থাকা রেডিওতে বিজ্ঞাপন বাজতে থাকে চতুর্থ জাতীয় নাট্য উৎসবের। স্থানীয় মিনার্ভা নাট্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের আয়োজনে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে নয় দিনের নাট্য উৎসব। ভারতের সাতটি ভাষার ২৩টি নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে এ উৎসবে। এগুলোর মধ্যে ১০টি পশ্চিমবঙ্গের, বাকি ১৩টি আসছে অন্যান্য রাজ্য থেকে।
ট্যাক্সিতে চড়লেই রেডিওতে অনবরত শোনা যাচ্ছে উৎসবের বিজ্ঞাপন। মিনার্ভা মঞ্চ, রবীন্দ্র সদন, ও মধুসূদন মঞ্চে বিনা টিকিটে দেখা যাচ্ছে নাটকগুলো। খবর নিয়ে জানা গেল, নয় দিনের এ উৎসবের জন্য রাজ্য সরকার প্রায় ৬৪ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে।
আজ রোববার বাংলা উৎসবের শেষ দিন। নিবেদকদের প্রত্যাশা, আজ অনেক দর্শক-শ্রোতা পাবেন তাঁরা। দর্শক বেশি না হলে এত বড় মিলনায়তন শূন্য মনে হয়। তাতে গাওয়ার আনন্দ পান না শিল্পীরা।