স্ত্রীর ইচ্ছে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত হোন আমজাদ হোসেন
স্ত্রী সুরাইয়া আকতারের ইচ্ছে তাঁর স্বামী অভিনয়শিল্পী ও বরেণ্য পরিচালক আমজাদ হোসেনকে যেন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। গতকাল শুক্রবার রাতে পরিচালকের আদাবরের বাড়িতে পরিবারের সবাইকে এই ইচ্ছের কথা জানান স্ত্রী।
প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আমজাদ হোসেনের বড় সন্তান অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন দোদুল। তিনি বলেন, ‘মায়ের ইচ্ছাই আমাদের ইচ্ছে। এ নিয়ে আমরা কেউ কোনো কথা বলতে চাই না। তিনি চাইছেন বাবা বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত হবেন।’
ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে টানা ১৬ দিন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পরও বাঁচানো যায়নি আমজাদ হোসেনকে। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৫৭ মিনিটে তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার এক দিন পার হয়ে গেলেও আমজাদ হোসেনের মরদেহ ঢাকায় কবে আসবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে দেশে আনার ব্যাপারে হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা এখনো শেষ হয়নি। যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই বলতে পারবেন, বাবার মরদেহ নিয়ে কবে ঢাকায় রওয়ানা হবেন, জানালেন ছোট ছেলে অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক সোহেল আরমান।
ঢাকায় আনা হলে আমজাদ হোসেনের মরদেহ শহীদ মিনার, এফিডিসিতে নেওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন দোদুল।
কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী এবং লেখক আমজাদ হোসেন মৃত্যুকালে স্ত্রী, চার ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমজাদ হোসেনকে। হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শুরু থেকেই তাঁকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। বাংলাদেশের বরেণ্য এই নির্মাতার শারীরিক অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মাথায় তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসার খরচ বাবদ ২০ লাখ টাকা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ ২২ লাখ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় আমজাদ হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক নেওয়া হয়। ২৭ নভেম্বর মধ্যরাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানে তিনি প্রখ্যাত নিউরোসার্জন টিরা ট্যাংভিরিয়াপাইবুনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
পরিচালক আমজাদ হোসেনের জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’,বড় বাড়ির মেয়ে, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি।
১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া তিনি আরও ১৪ বার জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার।