এই হয়েছে এক জ্বালা। চলছে লোকগানের উৎসব। পাকিস্তানের শিল্পী শাফকাত আমানত আলীর কাছে দর্শকের আবদার, চলচ্চিত্রের গান গাইতে হবে। গাইলেনও। উৎসব বলে কথা। দর্শকই তো উৎসব মাঠের প্রাণ। আগের দুই দিনের ধারাবাহিকতায় লোকসংগীত উৎসবের শেষ দিনে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামের মাঠ তখন কানায় কানায় পূর্ণ।
শেষ দিন পাঁচ রকমের পরিবেশনা ছিল। বাংলা গানের দুই শিল্পী এবং গানের দলের পাশাপাশি পাকিস্তান ও স্পেনের ঐতিহ্যবাহী সুরের মূর্ছনা ছড়িয়েছে কাল। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে উৎসব শেষ হয় রাত ১২টায়। তবে আসর জমে উঠতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছিল এদিন।
ঠিক ৬টায় শেষ দিনের প্রথম পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে হাজির হয় নকশিকাঁথা। নিজস্ব একটি গান দিয়ে শুরু করে প্রচলিত কয়েকটি লোকগান শোনান দলের গায়ক সাজেদ ফাতেমী। এর মধ্যে ছিল ‘তুকে লিয়ে’, ‘ওকি ও কাজল ভ্রমরা’, ‘নয়া বাড়ির নয়ারে বাইদ্যা লাগাইছে বাইগুন’, ‘চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা’ লোকজ গানের ফিউশন করে তারা।
নকশিকাঁথার পর মঞ্চে আসেন বাউল কবির শাহ্। ‘কে কয় পিরিত ভালারে’ গান দিয়ে শুরু করেন বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের এই যোগ্য শিষ্য। এবার নিরেট বাউলগানের স্বাদ মিলল। কবির শাহর দ্বিতীয় গান ‘কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে ফুলে পাইলা ভ্রমরা’, ‘ভব সাগরের নাইয়া, মিছা গৌরব করো রে পরের ধন লইয়া’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইলো’ গানগুলোতে প্রকৃত গানের সুর শুনতে পেল শ্রোতারা। অকারণ চিৎকার নয়, বরং ঠান্ডা মাথায় তাঁর মঞ্চে থাকা পুরোটা সময় কাজে লাগিয়েছেন। গুরু শাহ আবদুল করিমকে স্মরণ করে মঞ্চ থেকে নামেন কবির শাহ। এরপর স্পেন থেকে উড়ে আসা চার নারী মঞ্চের দখল নেন। চার নারীর এ দলের নাম লা মিগাস। মূলত তাদের পরিবেশনার মধ্যক দিয়ে টের পাওয়া যায় উৎসবের আন্তর্জাতিক আবহ। শুরুতেই নাটকীয়তা, ফিসফিস করে কয়েক লাইন গাইলেন। বাদ্যযন্ত্র ছাড়া। হঠাৎই তাঁদের কোরাস, সোল্লাসে ফেটে পড়েছিল দর্শক। শুধু গান নয়, নাচ, গিটারের রিদমের সঙ্গে ভায়োলিনের সুর মিলিয়ে ব্যান্ডটির পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের। গানের মূল সুরে ছিল ফ্লেমেঙ্গো ও ভূমধ্যসাগরীয় ধাঁচ। রাত ৯টায় অর্ণব তাঁর দল নিয়ে মঞ্চে উঠলে দর্শক করতালি আর উল্লাস বলে দেয় কিসের অপেক্ষায় ছিলেন এতটা সময়। ‘সোনা দিয়া বান্দাইছি ঘর’ গান দিয়ে শুরু করে বেশ কিছু জনপ্রিয় লোকগান শোনায় অর্ণব ও তাঁর দল।
উত্সবের শেষ আকর্ষণ ছিলেন পাকিস্তানের শাফকাত আমানত আলী। বিখ্যাত পরিবারের সন্তান। আমানত আলী খাঁর ছেলে শাফকাত আমানত আলী। তিনি পাটিয়ালি ঘরানার তৃতীয় প্রজন্মের শিল্পী। তাঁর দাদা আলী বকস পাটিয়ালি ঘরানার গোড়াপত্তন করেন। শাফকাত আমানত আলী প্রথমে আলোচনায় আসেন তাঁর ব্যান্ড ফিউসনের মাধ্যমে। ‘আখোঁ কি সাগার’, ‘খামাজ’, ‘তেরে বিনা’ গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়। এদিন এ গানগুলো পরিবেশন করতে ভোলেননি তিনি। শাফকাত বলিউডে সিনেমার ‘মিতওয়া’, ‘বিন তেরে’সহ অনেক জনপ্রিয় গানও তিনি উপহার দেন। তাঁর পরিবেশনার মধ্য দিয়েই শেষ হয় ঢাকা লোকসংগীত উত্সব ২০১৮-এর আসর।
বাংলাদেশসহ ৭ দেশের ১৭৪ জন শিল্পী নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক লোকগানের এই মহাযজ্ঞ।। এবারও দর্শকেরা বিনা মূল্যে শুধু অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে উত্সব উপভোগ করেছে। সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ ও সান কমিউনিকেশনের আয়োজনে মেরিল নিবেদিত এ আয়োজনে সহযোগিতা করে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, গ্রামীণফোন ও রাঁধুনী।