পরিচালকদের আত্মবিশ্বাসের অভাব: ফেরদৌস

>বেশ কিছুদিন ধরেই ঢালিউডের বাতাসে গুঞ্জন, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হওয়ার পর এ গুঞ্জন ডালপালা মেলতে থাকে। কেউ বলছেন যশোর আবার কেউবা বলছেন কুমিল্লা থেকে নির্বাচন করবেন ফেরদৌস। এদিকে গতকাল শুক্রবার দেশের ৩০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এই নায়কের নতুন সিনেমা ‘পবিত্র ভালোবাসা’। আগামী সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে ‘মেঘকন্যা’। এদিকে নতুন দুটি সিনেমার মহরত করেছেন এই নায়ক। নানা প্রসঙ্গ নিয়ে শুক্রবার রাতে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন ফেরদৌস
ফেরদৌস
ফেরদৌস

আপনি নাকি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন?
দেখা যাক, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।

‘পবিত্র ভালোবাসা’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। এই ছবির অভিনয়শিল্পী আপনি আর মৌসুমী। কিন্তু ছবির প্রচারণায় আপনাদের দেখা যায়নি?
আসলে প্রচারণার স্টাইলটা আমার ভালো লাগেনি। আমি আর মৌসুমী এই ছবির পরিচালক এ কে সোহেলের ‘খায়রুন সুন্দরী’তে অভিনয় করেছি। ছবিটি ওই সময় দারুণ জনপ্রিয় হয়। এবার তাঁর অনুরোধে আর তাঁকে সম্মান জানিয়ে আমরা কাজটা করেছি। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে আমরা সেই সম্মান পাইনি। ছবির পোস্টারে আমাদের কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আমরা অনেক সময় ভালো লাগা কিংবা দায়িত্বের জায়গা থেকে কিছু কাজ করি, এটা তেমনই একটা কাজ।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী চিত্রনায়ক ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী চিত্রনায়ক ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত

পরিচালক আপনাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি?
করেছেন। তিনি আমাদের বলেছিলেন পোস্টার বদলাবেন, কিন্তু তা হয়নি।

অনেক দিন পর পাশাপাশি আপনার দুটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে?
হ্যাঁ, সেই কিশোর ফেরদৌসকে খুঁজে পেল দর্শক (হাসি)। ভালো লাগা তো কাজ করছেই। ‘মেঘকন্যা’ ছবিটি তিন বছর আগে করেছি। আমি একটা পরিকল্পনা করে কাজগুলো করেছি। প্রতিটা চরিত্র ভিন্নধর্মী। ‘পবিত্র ভালোবাসা’ ছবির চরিত্রটা একেবারে ভিন্ন, যেমনটা আগে কখনোই করিনি। ‘মেঘকন্যা’ ছবির পরিচালক মিনহাজ অভি, নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, নতুন নায়িকা—সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা। শুনেছি, এই ছবির কয়েকটি গান এরই মধ্যে দারুণ হিট হয়েছে। আমি চাই, ছবিগুলো দর্শকদের আনন্দ দিক। সামনে আরও নতুন সিনেমা আসছে।

‘পবিত্র ভালোবাসা’ ছবির দৃশ্যে ফেরদৌস ও মৌসুমী
‘পবিত্র ভালোবাসা’ ছবির দৃশ্যে ফেরদৌস ও মৌসুমী

এখন তো চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমে গেছে?
সার্বিকভাবে চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। ছবির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। আমাদের শুরুর দিকে দেখতাম, বছরে ১০০ ছবি মুক্তি পেত। আর এখন তা ৩০-৪০টিতে এসে ঠেকেছে। সে হিসাবে পরপর দুই সপ্তাহে দুইটা ছবি মুক্তি পাওয়া যেকোনো শিল্পীর জন্যই আনন্দের ব্যাপার। যদি মাঝে একটু বিরতি নিয়ে ছবি মুক্তি পেত, তাহলে দর্শকও সময় নিয়ে ছবিগুলো দেখতে পারত।

এ বছরের শুরুটা হয়েছিল আপনার অভিনীত একটি সিনেমা দিয়ে?
হ্যাঁ, ‘পুত্র’ ছবিটি মুক্তির মধ্য দিয়ে বছরটা শুরু হয়েছিল। এরপর ‘কালের পুতুল’ মুক্তি পেয়েছে। এ বছর ১৬ ডিসেম্বর আমার নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ‘পোস্টমাস্টার ৭১’ ছবিটি মুক্তি পাবে। বলতে পারেন, বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আছি। অবশ্যই ভালো লাগা কাজ করছে। সামনের দিনগুলোতেও থাকব। আমার মনে হয়, আমাদের দেশে জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীদের সেই অর্থে মূল্যায়ন করা হয় না। কারণ আমি দেখি, আমাদের সমসাময়িক কাউকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। যখন একজন অভিনয়শিল্পী ম্যাচিউরড হন, তখন সেই শিল্পীকে নিয়ে পরিচালকেরা আর কাজ করেন না। এরপরও আমরা কজন এখনো কাজ করে যাচ্ছি। সবকিছু নির্ভর করে দর্শকের ভালোবাসার ওপর। এখনো দর্শক আমাদের ভালোভাবে নিচ্ছে, আমাদের ভালোবাসে। এই ভালোবাসা যত দিন থাকবে, কাজ করে যাব।

‘মেঘকন্যা’ ছবিতে ফেরদৌস ও নিঝুম রুবিনা
‘মেঘকন্যা’ ছবিতে ফেরদৌস ও নিঝুম রুবিনা

গত মাসে আপনার নতুন দুটি ছবির মহরত হলো?
দুটো ছবির বিষয়বস্তু অসাধারণ। একটা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপন্যাস অবলম্বনে। ‘গাঙচিল’ নামের এই ছবিতে একদমই গ্রামের একটা আবহ পাব। বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত এলাকা নিয়ে এই ছবির গল্প। আমার কাছে খুব ভালো লাগছে, অসম্ভব সুন্দর গল্প। ছবিতে আমি সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করব। মান্না ভাইয়ের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কৃতাঞ্জলি ফিল্মস থেকে যে ছবিটি নির্মিত হবে, সেটি ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে। ট্রাফিক জ্যাম আমাদের সবার জীবনকে যে দুর্বিষহ করে তোলে, ছবিতে সেটাই দেখানো হবে। অসাধারণ বিষয়। দুটো ছবি নিয়েই আমি আশাবাদী।

আপনি সাংবাদিকতার ছাত্র। শুনেছি, ‘গাঙচিল’ ছবিতে আপনি সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করবেন। কাজ করতে গিয়ে নিশ্চয়ই কিছুটা সুবিধা হবে?
সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করেছি। অনেক সাংবাদিক আমার বন্ধু। মনে হচ্ছে, ছবিটা করতে বেশি ভালো লাগবে। কারণ, এই পেশার সঙ্গে আমি খুব পরিচিত। যদিও এই পেশায় কাজ করা হয়নি। তারপরও মনপ্রাণ দিয়ে কাজটা করতে পারব। চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারব।

‘গাঙচিল’ সিনেমার মহরত অনুষ্ঠানে ফেরদৌস
‘গাঙচিল’ সিনেমার মহরত অনুষ্ঠানে ফেরদৌস

আপনি তো অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপরও জানতে চাই, এমন কোনো চরিত্র আছে, যে চরিত্রে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন?
‘মাসুদ রানা’। এই চরিত্রটি যদি আমাকে দিয়ে করানো হতো, খুব ভালো করতাম। ‘ফেলুদা’ চরিত্রেও অনেক ভালো করতে পারতাম। শুভ্র ও বোমক্যাশ নিয়ে আমার আগ্রহটা বেশি। আমাদের দেশে কিন্তু ‘সুপারহিরো’ চরিত্র এখনো সেই অর্থে হয়নি। সব সময় মনে হয়েছে, একটা সুপারহিরোর চরিত্র যদি করতে পারতাম। এটার ধারাবাহিকতা থাকত, দুই-তিন বছর পর পর এই ছবির সিক্যুয়েল আসত। দেখা যাক। চলচ্চিত্র তো ডিরেক্টর-নির্ভর মিডিয়া। আমরা অভাগা। আমাদের পরিচালকদের আত্মবিশ্বাস কমে গেছে। একজন পরিচালকের যেই আত্মবিশ্বাস থাকা দরকার, তা আমাদের বেশির ভাগ নির্মাতার নেই।

কেন?
আমরা জেনেছি, চলচ্চিত্রে ডিরেক্টর হচ্ছেন ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’। জাহাজটাকে তিনি চালিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু একটা জাহাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য যে দক্ষতা থাকা দরকার, তা কি সবার আছে? হাতে গোনা কিছু পরিচালক আছে। কিন্তু পুরো ছবিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ক্ষমতা দরকার, একটা ভালো চিত্রনাট্যকে পর্দায় রূপ দেওয়ার সেই ক্ষমতার জায়গাটা অনেক নড়বড়ে মনে হয়। প্রত্যেক পরিচালককে এই দোষ দেব না। একসময় ছিল, যখন সবাই বলত জহির রায়হানের সিনেমা, খান আতার সিনেমা, আমজাদ হোসেনের সিনেমা, চাষী নজরুল ইসলামের সিনেমা, সোহানুর রহমান সোহানের সিনেমা, মতিন রহমানের সিনেমা, এহতেশামের সিনেমা। তা এখন আর নেই। এককভাবে পরিচালককে দোষ দিচ্ছি না। একজন পরিচালককে দেখা গেল, একটা ভালো গল্প নিয়ে প্রযোজকের কাছে যান। যে সাপোর্ট থাকার কথা বা দরকার, সেটা অনেক সময় পান না। তখন পরিচালক হয়তো বাধ্য হয়েই আপস করতে বাধ্য হন। একটা ভালো সিনেমা কিন্তু চক্রাকার প্রক্রিয়ার ফসল। একজনের ওপর দোষ চাপালে হবে না।

‘জ্যাম’ ছবিতে অভিনয় করবেন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা
‘জ্যাম’ ছবিতে অভিনয় করবেন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা

আপনি তো ভারতের ছবিতেও কাজ করেছেন?
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বললাম। আমি সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে ‘ইয়েতির অভিযান’ নামে যে ছবিতে কাজ করলাম, মাত্র দুই-তিনটা দৃশ্যে অভিনয় করানোর জন্য সে আমাকে সুইজারল্যান্ড নিয়ে গেল। সেটা হয়তো আপস করে ভারতেই করে ফেলতে পারত। এই যে ছবির ভালোর জন্য পরিচালকের অনড় থাকা, ভালো হোক খারাপ হোক সেটা পরে দেখা যাবে। শুটিংয়ের আগেই যদি আপস করে ফেলি, একজন পরিচালকের যে স্বপ্ন থাকে, তখন তা নষ্ট হয়ে যায়।