আগামী সোমবারের মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারণের সময় বেঁধে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তা না করা হলে আগামী মঙ্গলবার থেকে তাঁরা আবার আমরণ অনশনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার একই দাবিতে অনশনের কর্মসূচি স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি তিন দিনের জন্য স্থগিত করলেও শিক্ষার্থীরা আজ শনিবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। এই তিন দিন তাঁরা প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা একাডেমিক কার্যক্রম থেকেও বিরত রয়েছেন।
গত বুধবার থেকে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে কয়েকজন শিক্ষকও যোগ দেন। শুক্রবার অনশনের তিন দিনে গড়ালে বরিশাল বিএম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. হানিফ ও বরিশাল মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য অধ্যাপক মো. ইউনুসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ওই দিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনস্থলে যায়। তাঁরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের তিন দিনের জন্য অনশন স্থগিতের আহ্বান জানান। এতে সম্মত হয়ে শিক্ষার্থীরা শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁদের অনশন আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত স্থগিত করেন।
আজ সরকারি ছুটির দিন হলেও সকাল ১০টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় এসে জড়ো হন। এ সময় তাঁরা উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বেলা ১টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আজ থেকে তিন দিনের অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছি। সোমবার পর্যন্ত আমরা এই কর্মসূচি চালাব। সোমবারের মধ্যে উপাচার্যকে অপসারণ করা না হলে মঙ্গলবার থেকে আমরা পুনরায় আমরণ অনশন শুরু করব।’
শফিকুল আরও বলেন, ‘নগরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা উপচার্যের অপসারণ অথবা পূর্ণ মেয়াদে ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন। যদি তাতে তাঁরা ব্যর্থ হন তবে তাঁরা আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবেন। আমরা তাঁদের কথায় আস্থা রেখে তিন দিনের জন্য আমাদের অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছি।’
আন্দোলনে সমর্থন দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আপাতত তিন দিনের জন্য অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছি। তবে প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’ তিনি বলেন, ‘অধ্যক্ষ মো. হানিফ স্যারসহ অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্যের অপসারণের বিষয়ে তাঁরা উদ্যোগ নেবেন। এ জন্য তাঁরা তিন দিন সময় নিয়েছেন। যদি তাঁরা ব্যর্থ হন তবে আগামী মঙ্গলবার থেকে তাঁরাও আমাদের আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই ঐক্যবদ্ধ। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকারী অন্তত ৬০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা এই দাবিতে গণপদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত চা-চক্র অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার না দেওয়ার প্রতিবাদে ওই দিন সকাল থেকেই আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ওই অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হন। পরে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপাচার্য এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করার একপর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিলেও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যান। পরে উপাচার্য তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও তাঁর পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৬ এপ্রিল রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠকে হলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই দিনই তা প্রত্যাখ্যান করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ এপ্রিল ১৫ দিনের জন্য ছুটিতে যান উপাচার্য এস এম ইমামুল হক। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর এই ছুটি মঞ্জুর করেন।
উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের চার বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৭ মে।