বড় খেলাপিদের দেখা নেই, ছোটদের আবেদনের হিড়িক
মাত্র ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে ঋণ পুনঃ তফসিলে সাড়া দেননি বড় ঋণখেলাপিরা। তবে হিড়িক পড়েছে ছোট খেলাপিদের পুনঃ তফসিল আবেদনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া বিশেষ এ সুবিধার শেষ সময় ছিল ২০ অক্টোবর।
সোনালী অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক মিলে ৩ হাজারের বেশি গ্রাহকের আবেদন পেয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো অল্প কিছু আবেদন পেয়েছে। তবে বড় খেলাপিরা আবেদন না করায় এখন নতুন করে সময় বাড়ানোর আলোচনা চলছে। আবার নীতিমালায় পরিবর্তন এনে নতুন করে আরও সুবিধা দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল বুধবার এক নির্দেশনায় বলেছে, সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আর কোনো আবেদন গ্রহণ করা যাবে না। সুবিধা নেওয়া গ্রাহকদের কোনো ঋণও দেওয়া যাবে না। তবে আদালতের আদেশ অনুযায়ী, আবেদনসমূহের বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে।
সরকারের পরামর্শে গত ১৬ মে ঋণ পুনঃ তফসিল ও এককালীন ঋণ শোধসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে খেলাপি ঋণের মাত্র ২ শতাংশ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য পুনঃ তফসিলের সুবিধা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ঠিক করে দেওয়া হয় ৯ শতাংশ।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকে প্রায় ১ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। তবে ব্যাংকটির বড় ঋণখেলাপিদের সিংহভাগই আবেদন করেননি। ব্যাংকটির শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে আটকে আছে ৩ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ছয়জন গ্রাহক বিশেষ সুবিধার ঋণ পুনঃ তফসিলের আবেদন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মুন্নু ফেব্রিকস, মাগুরা পেপার, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, অ্যাপেক্স ওয়েভিং, বিশ্বাস গার্মেন্টস ও রেজা জুট মিল। মুন্নু ফেব্রিকসের কাছে ২২৬ কোটি টাকা, মাগুরা পেপারের কাছে ১৫৫ কোটি টাকা, মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের কাছে ১৩০ কোটি টাকা, অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের কাছে ১২৮ কোটি টাকা, বিশ্বাস গার্মেন্টসের কাছে ১০৪ কোটি টাকা ও রেজা জুট মিলের কাছে ব্যাংকটির পাওনা ৯৮ কোটি টাকা ।
>বিশেষ নীতিমালার আওতায় ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের আবেদনের শেষ সময় ছিল গত রোববার।
অগ্রণী ব্যাংকে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ গ্রাহক বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃ তফসিলের আবেদন করেছেন। তবে ব্যাংকটির শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কেউ আবেদন করেননি।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম প্রথম আলাকে বলেন, বড় খেলাপিদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। তবে নতুন করে ঋণ পাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁরা আবেদন করতে আগ্রহী হননি।
রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ খেলাপিদের মধ্যে শুধু বেনিটেক্স গ্রুপ আবেদন করেছে। সব মিলিয়ে রূপালী ব্যাংকের ৩৫৬ জন গ্রাহক ৬৫১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার আবেদন করেছেন।
ভালো সাড়া পেয়েছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির বড় দুই খেলাপি গ্রাহক অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপ ঋণ পুনঃ তফসিলের আবেদন করেছে। অ্যাননটেক্সের কাছে ব্যাংকটির পাওনা ৫ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। আর ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছে পাওনা ৩ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির মধ্যে ইব্রাহিম গ্রুপ ও জনকণ্ঠ ছাড়া সবাই আবেদন করেছে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকটির ৮৩০ জন গ্রাহক আবেদন করেছেন।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকের বড় ঋণখেলাপিরা বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃ তফসিলের আবেদন করেছেন। কিছু আবেদন অনুমোদনও করা হয়েছে। আশা করছি, এর ফলে ডিসেম্বরে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অর্ধেক কমে যাবে।’
এদিকে বেসিক ব্যাংকও ভালো আবেদন পেয়েছে। ব্যাংকটির প্রায় ৪৮০ জন ঋণ নবায়নে আবেদন করেছেন। ব্যাংকটির শীর্ষ ২০ গ্রাহকের ৫ জন আবেদন করেছেন। বেসিক ব্যাংকের এমডি রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যেসব গ্রাহক আবেদন করেছেন, সেসব ঋণ নিয়মিত হলে খেলাপির পরিমাণ কমবে।