যশোর হতে পারে 'তৃতীয় বাণিজ্যিক নগরী'

>
  • ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা
  • নৌ, বিমান ও স্থলবন্দর সুবিধা রয়েছে
  • দীর্ঘদিন যশোরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানার খুব প্রসার ঘটেনি

স্থল, নৌ, বিমান—তিন বন্দরের সুবিধাই রয়েছে যশোরে। আছে সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশপথে যোগাযোগের সুবিধা। ভৌগোলিক দিক দিয়ে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যবর্তী স্থানে যশোর। দেশের আন্তজেলার ১৮টি রুটের যানবাহন যশোর হয়ে চলাচল করে, তাই যশোরকে ট্রানজিট শহর বলা যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ঢাকা–চট্টগ্রামের পর ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর হতে পারে দেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক রাজধানী।

যোগাযোগ–সুবিধার কারণে এ জেলায় যতটা শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটার কথা ছিল, তার ধারেকাছেও উন্নতি ঘটেনি। যশোরে আশানুরূপ শিল্পকারখানা গড়ে না ওঠার পেছনে গ্যাস সরবরাহ না থাকাকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া পণ্য রপ্তানির জন্য যশোরে বসে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও কঠিন। আগে যশোরে মানসম্মত আবাসিক হোটেলও ছিল না। তাই যশোরে শিল্পকারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কম ছিল।

তবে কয়েক বছর ধরে অবস্থার উন্নতি ঘটছে। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে বেশ কিছু ছোট-বড় শিল্পকারখানা। এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশের সবচেয়ে বড় বাজার এখন যশোরে। যেখান থেকে যন্ত্রাংশের বড় অংশ অর্থাৎ বাস-ট্রাকের কাঠামো (বডি) যায় সারা দেশে। যশোরে তৈরি ইট ও পাথর ভাঙার যন্ত্র দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষিভিত্তিক পণ্য মাছের রেণু পোনা, সবজি ও ফুল সারা দেশের বাজারে পাঠানো হয়।

যশোরে গত কয়েক বছরে যেসব শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে সেগুলো হলো, হিরো মোটরসাইকেলের সংযোজন কেন্দ্র, পশুখাদ্য উৎপাদনের
কয়েকটি কারখানা, ফ্যান তৈরির কারখানা, পাটকল, ডিভাইন গ্রুপের একাধিক তৈরি পোশাক কারখানা। যশোরে বিনিয়োগের অমিত সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা কিছু সমস্যাও চিহ্নিত করেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পাঁচ বছর ধরে যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। প্রশাসক দিয়ে চলছে ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনের কার্যক্রম। ফলে চেম্বার ভবনে এখন ব্যবসায়ীদের যাতায়াতই কমে গেছে। ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলার কেউ যেন নেই এখন।

অথচ ২০১০ ও ২০১১ সালে যশোরকে ‘তৃতীয় বাণিজ্যিক নগরী’ হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের তৎকালীন সভাপতি এ কে আজাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন। বৈঠকে যশোরের বসুন্দিয়া রেলস্টেশনে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) স্থাপন, ভৈরব নদ খনন করে নৌপথ পুনরুদ্ধার, রেলপথ ও সড়কপথ সংস্কার, বেনাপোল বন্দরের রাজস্ব আয়ের একটি অংশ দিয়ে যশোরের উন্নয়ন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, ফুল ও সবজি সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার নির্মাণ এবং শিল্পে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি তুলে ধরা হয়।

যশোর চেম্বারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুর করিম বলেন, ‘তিনটি বন্দর ও চার ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা থাকা একটি শহরে যে পরিমাণ শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটার কথা ছিল, তার কিছুই হয়নি যশোরে। শিল্পে গ্যাস–সংযোগ না থাকা এর অন্যতম কারণ। গ্যাসের সরবরাহ বদলে দিতে পারে এই অঞ্চলকে।’