ঋণ বাড়লেও মুনাফা বাড়েনি অগ্রণীর
>
- খেলাপি ঋণ আদায় আগের চেয়ে অর্ধেক কমেছে
- ২০১৮ সাল শেষে পরিচালন মুনাফা ছিল ২০১৭ সালের মতোই
- ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ শতাংশ
২০১৭ সালে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের আমানত ছিল ৫২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৬২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। সে হিসাবে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ শতাংশ। একইভাবে ২০১৭ সালে ঋণ ছিল ৩১ হাজার ৯১২ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। তাতে ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ শতাংশ। আমানত ও ঋণ বিতরণ বাড়লেও ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ আদায় না বেড়ে বরং কমে গেছে। এ কারণে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফাও খুব বেশি বাড়েনি।
ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের ঋণ আদায়ের চেয়ে নতুন ঋণ দিতে বেশি ব্যস্ত রাখা হয়েছিল। এ কারণে ঋণ আদায় আগের বছরের চেয়ে কম হয়েছে। আবার নতুন যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগের কিস্তি শুরু হয়নি। এ ছাড়া হঠাৎ করে ঋণের সুদ হার কমিয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে মুনাফাও তেমন বাড়েনি।
যোগাযোগ করা হলে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণের বড় অংশ ২০১৭ সালে আদায় হয়। এ কারণে গত বছরে আশানুরূপ আদায় হয়নি। আমরা খেলাপি ঋণের টাকা আদায়ে বিশেষ টাস্কফোর্স করেছি। আশা করছি নতুন সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে।’
জায়েদ বখত বলেন, ‘সুদ হার কমে যাওয়ায় আয় কমে গেছে। এ ছাড়া যেসব ঋণ গেছে, তা থেকে আয় শুরু হয়নি। চলতি বছরে সুদ আয়ের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও অনেক বাড়বে। সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
অগ্রণী ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে ব্যাংকটি খেলাপি ও অবলোপন করা ঋণ থেকে ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ থেকে ৯৭৮ কোটি টাকা ও অবলোপন থেকে ৪৭ কোটি টাকা আদায় করা হয়। এর মধ্যে নগদ আদায় হয় ৩৯৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে আদায় করা হয়েছিল ২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ আদায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৯৫০ কোটি টাকা, গত বছরে তা কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৯৫৭ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি ও করপোরেট কর বাদ দেওয়ার পরই প্রকৃত মুনাফা বের হবে। এ ছাড়া নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও মূলধন ঘাটতিতেও রয়েছে ব্যাংকটি। এসব হিসাব চূড়ান্তের পরই প্রকৃত মুনাফার হিসাব হবে।
গত সেপ্টেম্বরের হিসাবে, ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। ওই সময়ে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি ৮৬৭ কোটি টাকা ও মূলধন ঘাটতি ৮৬৬ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে অগ্রণী ব্যাংকের আমদানি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বেড়েছে। তবে কমেছে সুদবিহীন আয়। ২০১৭ সালে আমদানি বাণিজ্য হয়েছিল ১৩ হাজার ২৬৬ কোটি টাকার, গত বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায়। ২০১৭ সালে রপ্তানি বাণিজ্য হয়েছিল ৭ হাজার ৫৮ কোটি টাকার, গত বছরে তা বেড়ে হয় ৮ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। একইভাবে প্রবাসী আয়ও ১০ হাজার ৬০৫ কোটি থেকে বেড়ে গত বছর শেষে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬৮০ কোটি টাকায়। তবে সুদবিহীন আয় ৪৪৯ কোটি থেকে কমে দাঁড়ায় ৩৯৯ কোটি টাকা।