ইতালিতে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন ও গণহত্যা দিবস পালন
বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদী নেতৃত্বে অর্জিত হয় স্বাধীনতা

ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ মর্যাদা ও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন এবং গণহত্যা দিবস পালন করেছে। আলাদা দুটি কর্মসূচির মাধ্যমে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন এবং ২৫ মার্চ ভাবগাম্ভীর্যে গণহত্যা দিবস পালন করা হয়।
স্বাধীনতা দিবস
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস রাজধানী রোমে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৪৮তম বার্ষিকী উদ্যাপন করেছে। ২৬ মার্চ সকালে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে সমস্বরে জাতীয় সংগীত গেয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন।

দূতাবাসের কর্মকাণ্ডকে প্রবাসীদের আরও কাছে নিয়ে আসার অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ের ধারাবাহিকতায় প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত তুস্কুলানা এলাকার Teatro San Gaspare মিলনায়তনে বিকেলে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ দূতাবাস। অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিশু-কিশোরসহ অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করেন।
দিবসটির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যাঁর নেতৃত্বে বাঙালি পেয়েছে এক স্বাধীন বাংলাদেশ। তাঁরা বলেন, প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোরদের বাংলাদেশের ইতিহাস ও সমৃদ্ধ কৃষ্টি-সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া ও চর্চার উৎসাহিত করা খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাস বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকে। যাঁর অবিসংবাদী নেতৃত্বে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। তিনি বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ ও সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাঙালিরা তদানীন্তন পাকিস্তানের অধীনে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বৈষম্যের শিকার ছিল। এই বৈষম্য থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তি প্রদানের জন্য বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করেছি। স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে অর্থনৈতিক মুক্তি প্রদানের জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি এ কাজ সমাপ্ত করতে পারেননি। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে ও ২০৪১ সালে মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এ ক্ষেত্রে সব প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

সভার শেষে প্রবাসী শিল্পীদের অংশগ্রহণে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী নৃত্য এবং দেশাত্মবোধক ও আধুনিক সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে উপস্থিত অতিথিদের মুগ্ধ করেন।
কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। এরপর দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণীসমূহ পাঠ করা হয়।
যথাযথ ভাব গাম্ভীর্যে গণহত্যা দিবস পালন
যথাযথ ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস গণহত্যা দিবস পালন করেছে। এ উপলক্ষে ২৫ মার্চ দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রোমে বসবাসরত বিভিন্ন স্তরের প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। এরপর দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। পরে একাত্তরের গণহত্যার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনীর বর্বরতা ও গণহত্যার শিকার শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান।

রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার তাঁর বক্তব্যে ২৫ মার্চ কালরাতের সব শহীদকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী ২৫ মার্চের রাতে যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তা সারা বিশ্বের মধ্যে জঘন্যতম গণহত্যা। তিনি এ জঘন্য গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানান। যেহেতু মহান শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেসকোর গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে, ২৫ মার্চের কালরাতে সংঘটিত গণহত্যাও আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ ক্ষেত্রে বিদেশে বসবাসরত সব প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।