
পূর্ব লন্ডনের রিচমিক্স থিয়েটারে মঞ্চস্থ হলো জনপ্রিয় বাংলা পালা গান বা গ্রামবাংলার থিয়েটার বেদের মেয়ে জোছনা। গত রোববার (১৮ নভেম্বর) এ পালা পরিবেশিত হয়। প্রাচীন বাংলার গাথাকে উপজীব্য করে এই অভিনব বাংলা অপেরার ইংরেজি শিরোনাম ছিল ক্লাস-কনফ্লিক্ট। পরিবেশনা শেষ হতে না হতেই প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্যামেন আইল্যান্ডের সাবেক গভর্নর ও ব্রিটেনের অন্যতম শীর্ষ কূটনীতিক আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ' আমি মন্ত্রমুগ্ধ। দেড় ঘণ্টাব্যাপী বাংলা লোক-শিল্পের এই জাদুময় অভূতপূর্ব উপস্থাপনা দেখে আমি সত্যিকার অর্থেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তিনি এমন সম্মোহনী পরিবেশনাকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানোর অনুরোধ করলে হলভর্তি দর্শকেরা করতালি দিতে দিতে দাঁড়িয়ে পালা গানের কুশীলবদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

আনোয়ার চৌধুরী আরও বলেন, বাংলার গ্রামীণ বলতে গেলে কুটির শিল্পকে রাধারমণ সোসাইটি বিশ্বমঞ্চে নিয়ে আসার যে অব্যাহত চেষ্টা করে যাচ্ছে তা আমাকে যারপরনাই অনুভূত করে। পালাগানের নির্দেশক ও বয়াতি টি এম আহমেদ কায়সারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, কায়সার আমার ব্যক্তিগত বন্ধু। কিন্তু যে কারণে কায়সার আমার ও আরও অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছেন, তা হলো শিল্পের প্রতি তার অদম্য নেশা। ক্লান্তিহীনভাবে একের পর এক বিশ্বমাপের পরিবেশনা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া আর ভালোবাসা দিয়ে বিভিন্ন রকমের মানুষের হৃদয় জয় করে নেওয়া। বেদের মেয়ে জোছনার পালা এরই ধারাবাহিকতার অংশ। লোকগাথার কাল-নাগকে দিয়ে আধুনিক জীবনের অভিজ্ঞতা, পুঁজিবাদী রাজনীতি আর সিস্টেমের যে এলিগরি নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনই বিম্বিত হতে দেখি।
ব্রিটেনের শীর্ষ শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী চন্দ্রা চক্রবর্তী শুরুতেই পালাগানের ওপর সংক্ষিপ্ত ভূমিকা দিতে গিয়ে বলেন, বাংলা সংস্কৃতির আদিমতম উৎস এই লোককাব্য বা গ্রাম থিয়েটারের কাহিনিগুলো অনেক সময় ঈশপের গল্পের মতো এক ধরনের রূপকথা মনে হলেও এতে গভীরভাবে প্রোথিত আছে মানবিক আবেগ, প্রেম-ভালোবাসা আর শাশ্বত সব মানবিক-বাণী।

প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্যানেলিয়া নামের এক পোলিশ দর্শক জানান, বাঙালি কোনো পরিবেশনা তিনি এই প্রথম দেখলেন এবং তিনি এই মিউজিক্যালের সংগীত, নৃত্য ও অন্তর্নিহিত রূপকল্পে দারুণ অভিভূত।
রিচমিক্স অডিয়েন্স ক্লাবের জন ফিল্ড ও উন্নয়নকর্মী পিটার মুসগ্রাভও পরিবেশনা নিয়ে উচ্ছ্বাসিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বেদের মেয়ে জোছনা পালাগানের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন সোনিয়া সুলতানা। তার অভিনয়, নৃত্য ও মঞ্চ বিচরণ ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত। রাজা চরিত্রে কবি ও সাংবাদিক সারওয়ার ই আলম সাবলীল ছিলেন আদ্যোপান্ত। যুবরাজ চরিত্রে অভিনয় করেন সোহেল আহমেদ। প্রোডাকশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন কবি শামিম শাহান।

কিবোর্ড ও ভোকাল সহযোগিতায় ছিলেন মেধাবী শিল্পী অমিত দে। হারমোনিয়ামে অমল পোদ্দার। নারীকণ্ঠ সংগীতে তরুণ ও প্রতিভাবান শিল্পী জেসি বড়ুয়া। ঢোল সংগত করেন সাঈদ ফাহিম। মন্দিরায় রাহেল চৌধুরী ও কণ্ঠ-সহযোগিতায় বাউল শিল্পী সাজ্জাদ মিয়া। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন সুহেল মিয়া (জল্লাদ), জুনায়েদ (রাজার অনুচর) ও অমর বৈদ্য (ওঝা), অণু দেব (ধামাইল নাচ), লাজান (নাগিনী) ও মৌলি ধর (ধামাইল নাচ)।
সিলেট টু লন্ডন নামে একটি অনলাইন গ্রুপ পুরো পরিবেশনা ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করে।