সিডনিতে সমুদ্রে ডুবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সমুদ্রে ডুবে এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, একই ঘটনায় আরও দুজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) দক্ষিণ সিডনির ওয়াটামোলা সমুদ্র সৈকতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর নাম রাহাত বিন মোস্তাফিজ।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্বেচ্ছাসেবক লাইফগার্ড জর্জ ওর্ডেনেস জানান, সমুদ্রতীরবর্তী উঁচু জায়গা থেকে তিনজন একসঙ্গে লাফ দেন। এদের তিনজনেরই ফুসফুসে পানি ঢুকলে দুজন আপ্রাণ চেষ্টায় পানির ওপরে আসতে পারলেও একজন তলিয়ে যান। ডুবন্ত তিন যুবকের মধ্যে দুজনকে বাঁচানো গেলেও আরেকজনকে খুঁজে পেতে দেরি হয়ে যায় বলে গণমাধ্যমকে জানান তিনি। ঘটনাস্থলে দ্রুত জরুরি সেবা পৌঁছালে আহতদের নিকটবর্তী সেন্ট জর্জ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। উদ্ধারকর্মীরা পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন।
নিহত রাহাত ও তার আহত দুইর বাড়ি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় বলে জানা গেছে। তারা একসঙ্গে বাস করতেন সিডনির ওয়ালি পার্কের একটি বাড়িতে। বৃহস্পতিবার বন্ধুদের সঙ্গে সিডনির রয়্যাল ন্যাশনাল পার্কসংলগ্ন জনপ্রিয় সাঁতার কাটার জায়গা ওয়াটামোলা সৈকতটিতে ভ্রমণে যান। তারা সবাই সাঁতার জানতেন। সাঁতারে নামার আগেই তারা বেশ ক্লান্ত ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্র সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে এ দুর্ঘটনা ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত জর্জ ওর্ডেনেসের বর্ণনা প্রকাশ করেছে। সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে জর্জ বলেন, ‘সমুদ্র পাড়ের উঁচু জায়গা থেকে সাঁতারুরা সাগরে লাফিয়ে পড়ে। ওঁরা তিনজনও তাই করেছিল। তবে আমার মনে হয় ক্লান্তি ও অপ্রস্তুতভাবেই সমুদ্রে লাফিয়ে পড়ে সাঁতার কাটতে গিয়ে তারা আরও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আমি, আমার স্ত্রী ও আমার তিন সন্তান বাড়িতে ফেরার উদ্দেশে সমুদ্রের কাছাকাছি গাড়ির পার্কিংয়ে ছিলাম। এ সময় একজন আমাদের কাছাকাছি এসে মাটিতে শুয়ে বমি করতে শুরু করে। আরেকজন পানির কাছেই শুয়ে বমি করছিল। তার অর্ধেক শরীর পানিতে ছিল। আমি একজনকে সাহায্যের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে শুরু করি। তিনি খানিকবাদেই তার নাম ও আরও দুজন পানিতে আছে সে কথা জানান। তিনি এও জানান তাদের মধ্যে একজন পানিতে হারিয়ে গেছে। তারা দুজন তৃতীয়জনকে খোঁজার চেষ্টা করতে গিয়ে গুরুতর অবস্থার সম্মুখীন হয়। আমার স্ত্রী তাদের অবস্থা গুরুতর দেখতে পেয়ে দ্রুত জরুরি সেবায় কল করেন।’

খুব কম সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে জরুরি সেবা পৌঁছায়। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত রাহাতকে মৃত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকেই উদ্ধার করে। তারা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল না বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। একই স্থানে এর আগে ২০১৬ সালে ২৭ বছর বয়সী এক যুবক একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে মারা যান।
এ দিকে অস্ট্রেলিয়ায় খুব কম সময়ের ব্যবধানে আত্মহত্যা, পাহাড় থেকে পড়ে ও পাহাড়ে পানিশূন্যতা এবং এখন পানিতে ডুবে পরপর চার তরুণ বাংলাদেশির মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে সিডনি ও আশপাশ এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে। রাহাতদের মরদেহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য পুলিশ।