খুলনার ময়ূর নদী দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে লিনিয়ার পার্কের স্থাপনা। নগরের গল্লামারীতে নির্মাণাধীন পার্কটির জন্য নদীর পাঁচটি স্থানে স্থাপনাগুলো গড়ে তোলা হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, তীর থেকে নদীর ভেতরের দিকে ১৫-২০ ফুট জায়গা নিয়ে স্থাপনা তৈরির কাজ চলছে। নদীর মধ্য থেকে কংক্রিটের বেজমেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। নদীর কিছুটা অংশ দখল করে বেঁধে দেওয়া হয়েছে পশ্চিমাংশের পাড়। নদীর প্রায় এক কিলোমিটার অংশে স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থাপনাগুলো হচ্ছে ডেকসহ ঘাট। নদীর মধ্যে কেন? জানতে চাইলে শ্রমিকেরা কিছু জানেন না বলে জানান। তবে এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনে খোঁজ নেওয়ার জন্য বলেন তাঁরা।
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সম্পত্তি শাখার কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পার্কের কাজ প্রায় শেষ। পার্কটি ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্রপ্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে সিটি রিজিওন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (সিআরডিপি) আওতায় পার্কের মধ্যে ওয়াকওয়েসহ কিছু সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ চলছে। এর বেশি কিছু জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
ওই প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছায়ফুদ্দীনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সিআরডিপির আওতায় পার্কের মধ্যের কিছু স্থাপনা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় ৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কের মধ্যে ১ হাজার ৮৫০ মিটার ফুটপাত ও ৬টি ডেক নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩টি ডেক হবে ঘাটসহ।
পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনার সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুলনা লিনিয়ার পার্ক স্থাপনের কার্যক্রম চলছে বহুদিন ধরে। শুরু থেকেই আমরা নদী বাঁচিয়ে পার্ক স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করে আসছি। এত দিন নদীর ওপর হাত পড়েনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করছি, নদীর মধ্যেই স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। তা ছাড়া পাড় বাঁধানোর নামে নদীর অনেক জায়গা দখল করা হয়েছে। এমনিতেই নদীটির অনেক স্থান প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। আর এসব স্থাপনা নির্মাণ হলে নদীটি আস্তে আস্তে ধ্বংস হয়ে যাবে।’
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ময়ূর নদী খুলনার একমাত্র নদী যে নদী দিয়ে নগরের পানি নিষ্কাশিত হয়। তাই সিটি করপোরেশনেরই উচিত নদীটি রক্ষা করা। কিন্তু নগরের সৌন্দর্য রক্ষা করতে গিয়ে নদীটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ুক, তা কারও কাম্য নয়।