রীতার বাবা ও স্বামী পুড়ে অঙ্গার
ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের ব্যাঙডোবা গ্রামের মোতালেব শেখের (৬৫) মেয়ে রীতা আক্তার (২৮)। ১১ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল একই ইউনিয়নের উত্তর ডোমরাকান্দি গ্রামের ইজায়দুল ইসলামের (৩২) সঙ্গে।
গত শুক্রবারও বেঁচে ছিলেন রীতার বাবা ও স্বামী। আজ রীতার মাথার ওপর দুটি ছাদের কোনোটাই নেই। মানুষ দুটি পেট্রলবোমায় জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হয়ে মারা গেছেন।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে চারটার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশালের গৌরনদী দক্ষিণ মাহিলারা নামক স্থানে একটি ট্রাকে পেট্রলবোমা ছুড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ওই ট্রাকের চালক ইজায়দুল, তাঁর শ্বশুর মোতালেব শেখ ও ইজায়দুলের সহকারী ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লার বিহারি কলোনির মুন্নু বিশ্বাস (৪৭)।
দুর্বৃত্তদের বোমায় স্বামী ও বাবাকে হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন রীতা। গতকাল উত্তর ডোমরাকান্দি গ্রামে গিয়ে রীতাকে আহাজারি করতে দেখা যায়। ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, ‘আমার দুই মাইয়ারে কেমনে বাঁচাব? ওরে তোরা আমারে ওদের বাবার কাছে নিয়া যা, ওদের নানার কাছে নিয়া যা।’
মোতালেব শেখের এক ছেলে চার মেয়ের মধ্যে রীতা চতুর্থ। মোতালেব ভ্যানগাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম আড়াই বছর ধরে বিদেশে (লেবানন) কর্মরত রয়েছেন।
মোতালেব তাঁর শাশুড়িকে বরিশাল থেকে আনার জন্য জামাতা ইজায়দুলের ট্রাকে চেপে বসেছিলেন। ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে শ্বশুরকে ট্রাকে তোলেন ইজায়দুল। গাজীপুরের একটি ফ্যাক্টরি থেকে পোলট্রি ফিড নিয়ে বরিশাল যাচ্ছিলেন তিনি।
এদিকে একই ট্রাকে ইজায়দুল ও মোতালেবের সঙ্গে পুড়ে মারা যান চালকের সহকারী মুন্নু বিশ্বাস। মুন্নু শহরের গোয়ালচামট বিহারি কলোনিতে থাকতেন। গতকাল দুপুরে সেখানে গিয়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য চোখে পড়ে। মুন্নুর স্ত্রী পারভীন বেগমের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
আহাজারির ফাঁকে ফাঁকে পারভীন বলছিলেন, ১৫ দিন আগে মুন্নু ট্রাকের কাজে বের হন। গত শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে পারভীনকে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, শনিবার ফরিদপুর ফিরবেন। মুন্নু সত্যি সত্যিই ফরিদপুরে ফিরেছেন শনিবার, তবে লাশ হয়ে।