৫৭ মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি

আজ ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার ১৫তম বার্ষিকী। ২০০৫ সালের এই দিনে ৬৩টি জেলায় একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা ফাটিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় জেএমবি (জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ)। বোমার সঙ্গে প্রচারপত্র রেখে তারা প্রচলিত বিচারপদ্ধতি বাতিল ও আল্লাহর আইন কায়েমের দাবি জানায়। এর কয়েক বছর আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সিনেমা হল, যাত্রামঞ্চ, মাজার-খানকায় বোমা হামলা চালালেও ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের পর ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে জেএমবি।

১৭ আগস্টের বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ১৬১টি মামলা হয়। র্যাব সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এসব মামলায় মোট ৬৬০ জনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে একই ব্যক্তি একাধিক মামলার আসামিও আছেন। র্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করে ৪৫৫ আসামিকে। তাঁদের মধ্যে ৩৫ জন বিভিন্ন সময় জামিনে মুক্তি পান। ৫০ আসামি এখনো পলাতক।

র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে জেএমবির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল। হামলা করার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। তিনি বলেন, ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী যে জঙ্গি হামলা হয়েছিল, সেই নাশকতার প্রেক্ষাপটকে বাস্তবতায় রেখে র্যা ব জঙ্গিবিরোধী তৎপরতায় অত্যন্ত সচেষ্ট।

তবে জেএমবি দুর্বল হয়ে পড়লেও বিলুপ্ত হয়নি। এরই মধ্যে জেএমবি থেকে একটা অংশ বেরিয়ে আইএস মতাদর্শীদের সঙ্গে মিলে নতুন জঙ্গি সংগঠন করেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যার নাম দিয়েছে নব্য জেএমবি; যারা হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা ও দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক অভিযানে নব্য জেএমবির বেশির ভাগ নেতাই নিহত বা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

ওই বোমা হামলার ঘটনায় রাজধানী ঢাকায় ১৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে সাতটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। চারটি মামলার রায় হয়েছে। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষীর অনুপস্থিতি মামলার রায়ের ক্ষেত্রে বড় বাধা। বারবার সমন দিলেও সাক্ষীরা আসেন না। তিনি বলেন, ঢাকার আদালতে পাঁচটি মামলা বিচারাধীন। ইতিমধ্যে অনেকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক দিন আদালত বন্ধ থাকার পর গত সপ্তাহে খুলেছে। এখন আবার সাক্ষীদের সমন জারি করা হবে। তাঁরা আদালতে না এলে সাক্ষ্য নেওয়া শেষ করে বিচারকাজ দ্রুত শেষ করা হবে।

জামালপুরের শায়খ আবদুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে জঙ্গি সংগঠন জেএমবির প্রতিষ্ঠা হয়। তবে সংগঠনটির নাম ব্যাপকভাবে জানাজানি হয় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার ঘটনায়। এতে ২ জন নিহত ও ১০৪ জন আহত হন। এরপর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নামে র্যাব ও পুলিশ। ছয় মাসের মধ্যে শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ জেএমবির তখনকার শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই গ্রেপ্তার হন। এর মধ্যে শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাইসহ শীর্ষ ছয় নেতার ফাঁসির রায় কার্যকর হয় ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে। এরপর বিভিন্ন সময় নতুন নতুন নেতৃত্বে জেএমবি সংগঠিত হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে সংগঠনটি আর বড় কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেনি।

ওই বোমা হামলার ঘটনায় রাজধানী ঢাকায় ১৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে সাতটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। চারটি মামলার রায় হয়েছে। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষীর অনুপস্থিতি মামলার রায়ের ক্ষেত্রে বড় বাধা। বারবার সমন দিলেও সাক্ষীরা আসেন না।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জেএমবি ও নব্য জেএমবি উভয়ই সাংগঠনিকভাবে দুর্বল অবস্থায় আছে। নব্য জেএমবি কিছু করার চেষ্টা করলেও পুলিশের তৎপরতায় তাদের সব পরিকল্পনা ভন্ডুল হয়ে যাচ্ছে। জামিনে বেরিয়ে আসা জঙ্গিরা যাতে কোনো নাশকতা ঘটাতে না পারেন, সে বিষয়েও তাঁদের ওপর পুলিশের নজরদারি আছে।

গত মাসে দেশজুড়ে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিটে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে বলা হয়, দেশে হত্যাকাণ্ড, নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছে নব্য জেএমবি। সেই সতর্কবার্তা জারির পর গত ২৪ জুলাই রাজধানীর পল্টনে পুলিশের তল্লাশিচৌকির পাশে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এরপর ১১ আগস্ট সিলেট থেকে নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট। তাঁরা হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে বোমা হামলাসহ নাশকতার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানায় সিটিটিসি।

মামলাগুলোর মধ্যে আসামিদের শনাক্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে না পারায় পুলিশ ১০টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। বাকি ১৫১টি মামলায় ১ হাজার ১০৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

র্যাবের সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ১০৪টি মামলার রায় হয়েছে। এসব মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডসহ ২৫১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেন আদালত। খালাস পান ১২০ জন। ৫৭টি মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি।

গত এক বছরে দুটি মামলার রায় হয়েছে ঝালকাঠিতে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় পৃথক দুটি ধারায় ২ জনকে যাবজ্জীবন ও ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। আরেক মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিদের খালাস দেওয়া হয়।