কোনো কিছুতেই সমুদ্রপথে মানব পাচার থামছে না
দালালদের গ্রেপ্তার, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মৃত্যু, ট্রলারডুবিতে মৃত্যুর ঘটনা—কোনো কিছুই সমুদ্রপথে মানব পাচার প্রতিরোধ করতে পারছে না। প্রায় প্রতিদিনই কক্সবাজারের কোথাও না কোথাও সমুদ্রপথে মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা ধরা পড়ছে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া এলাকা থেকে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় ২১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ১২ জন নারীও রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মহেশখালী চ্যানেলে অভিযান চালিয়ে ১০ জন ও মহেশখালী পৌরসভার গোরকঘাটা থেকে ছয়জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। এ সময় একজন দালালকেও গ্রেপ্তার করা হয়। আটক রোহিঙ্গাদের কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া থেকে মালয়েশিয়াগামী ১০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে এক শিশু, ছয় নারী ও তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), টেকনাফের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যেতে চান এমন রোহিঙ্গার সংখ্যা অসংখ্য। অনেকের আত্মীয়স্বজন মালয়েশিয়ায় থাকেন। তাঁদের প্ররোচনায় শিবিরে রোহিঙ্গারা ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছে।
বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী বলেন, উখিয়ার কুতুপালং ও জামতলী রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির থেকে দালাল চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের বের করে আনে। রাতে তাদের সাগরে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজে তুলে দেওয়ার কথা বলে বাহারছড়ার বিভিন্ন এলাকায় জড়ো করা হয়।
উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা বলেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত নিকটাত্মীয়রা দালালদের সঙ্গে জনপ্রতি আড়াই লাখ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকার চুক্তি করে। ট্রলারে চড়ার আগেই দালালদের হাতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে তুলে দিতে হয়। তবে এসব টাকার লেনদেন হয় মালয়েশিয়া থেকে।
>সর্বশেষ শুক্রবার রাতে টেকনাফের বাহারছড়া থেকে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় ১২ নারীসহ ২১ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার।
স্থানীয় লোকজন বলেন, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সাগর শান্ত থাকে। তখন ট্রলারে মালয়েশিয়ায় যাওয়া অনেকটা সহজ হয়। দালালেরা এই সুযোগকে ব্যবহার করে। যদিও ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় সেন্ট মার্টিনের অদূরে ছেঁড়াদ্বীপ এলাকায় ১৩৮ জন যাত্রী নিয়ে একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। তাদের মধ্যে ৭৩ জনকে জীবিত ও ২১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এখন পর্যন্ত ৪৪ জন নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সমুদ্রের কিনারায় রাখা টেকনাফের সদর থেকে বাহারছড়া পর্যন্ত এলাকায় পাঁচটি নৌযান ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা। একই সময়ে বাহারছড়ার নোয়াখালী পাড়ায় মানব পাচারকারীদের দালাল হিসেবে চিহ্নিত চার ব্যক্তির বসতঘরেও আগুন দেওয়া হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ সদরের হাবরা এলাকায় মানব পাচারের দালাল হিসেবে পরিচিত দুই ব্যক্তির বসতঘরে আগুন দেয় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, দালালদের প্রতিরোধের জন্য স্থানীয় ‘উত্তেজিত’ জনতা এসব ‘গায়েবি’ হামলা চালাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।