ফাতেমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কি হবে না
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় হয়েছেন ১৪তম। সুযোগ পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, খুলনা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাটোরের লালপুরের ফাতেমা খাতুনের ভাবার কথা ছিল, সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কোনটিতে তিনি ভর্তি হবেন। কিন্তু অভাবের সংসারে বড় হওয়া ফাতেমাকে ভাবতে হচ্ছে, আদৌ কোনোটিতে ভর্তির সুযোগ মিলবে কি না।
ফাতেমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রয়োজন ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু চা–দোকানি বৃদ্ধ বাবা জানিয়েছেন, তাঁর পক্ষে একসঙ্গে এ টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। এতেই সুযোগ পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারার আশঙ্কায় ফাতেমা।
ফাতেমার বাড়ি লালপুরের তিলোকপুর গ্রামে। বাবা ইউসুফ আলী (৬৫) গ্রামের বাজারে চা বিক্রি করেন। দুই বোনের মধ্যে ফাতেমা ছোট। স্থানীয় গৌরীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন জিপিএ–৪.৯২ নিয়ে। পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসিতে পেয়েছিলেন জিপিএ-৫।
ফাতেমা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ ইউনিটে ৪৯৫তম হয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটে ৭৪৭তম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে ৩৩৪তম ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে হয়েছেন ১৮৩তম।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ফাতেমার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, টিন আর খড়ের ঘরে মা–বাবার সঙ্গে থাকেন তিনি। ফাতেমার বড় বোন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। গ্রামের তিলকপুর মোড়ে ছোট একটি দোকানে চা বিক্রি করছিলেন ফাতেমার বাবা ইউসুফ আলী। বলছিলেন, এই দোকানের আয়ে সংসার চলে। বড় মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারলেও ছোট মেয়ের ভর্তি ও পরে অন্যান্য খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই তার।
দোকান থেকে বাড়িতে যাওয়ার পথে ইউসুফ আলী বলছিলেন, বয়স হয়ে যাওয়ায় ঠিকমতো কাজও করতে পারেন না। তবু দুই মেয়ের পড়াশোনা আর সংসারের খরচ জোগাতে চা বিক্রি করে চলেছেন। বাড়ির তিন শতক জমি ছাড়া নিজের উল্লেখ করার মতো সম্পত্তি নেই। টিন আর খড়ের বেড়া দেওয়া ঘরে মায়ের সঙ্গে বসে ছিলেন ফাতেমা। তাঁর স্বপ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে দেশের কল্যাণে কাজ করা। পাশে দাঁড়াতে চান তাঁর মতো দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের।
গৌরীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হজরত আলী বলেন, ‘পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে ফাতেমা প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষার্থীদের কাছেও অনুসরণীয়। কিন্তু সে–ই যদি টাকার অভাবে ভর্তি হতে না পারে, তাহলে তা আমাদের সবার ব্যর্থতা।’