মুক্তিপণের আশায় শিশু আকিবকে হত্যা
শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরে আকিবের লাশের মুখ ঢাকা ছিল একটি জামায়। তার পরিবার বলছে, জামাটি আকিবের নয়। এই জামার সূত্র ধরেই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।
ওই জামাটি প্রতিবেশী উমর কাজি রাব্বির (২০)। তিনি পৌর শহরের পূর্ব কালিনগর এলাকার মো. আইনাল হকের ছেলে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করছেন। মামলাটি গতকাল গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আকিব ইসলাম খান (১২) শহরের পূর্ব কালিনগর গ্রামের আবদুর রউফের ছোট ছেলে। সে স্থানীয় শাহিন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ছিল। তার বাবা বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার প্রতিবেশী চারজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত শনিবার বিকেলে আকিব বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। চার দিন পর বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আকিবদের বাড়ির পাশে ধানখেত থেকে তার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তার মুখ একটি জামায় ঢাকা ছিল। গলায় ছিল গামছা প্যাঁচানো।
পুলিশ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদে জন্য বুধবার সন্ধ্যায় সাতজনকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা এ হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করেন। বৃহস্পতিবার সকালে লাশের সঙ্গে থাকা জামাটি আটক উমর কাজি রাব্বিকে পরানো হয়। তখন তিনি কিছুটা নিশ্চুপ হয়ে যান। পরে তাঁকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদে জামাটি তাঁর নিজের বলে স্বীকার করেন। এরপর পুলিশের কাছে আকিব হত্যার ঘটনার বিবরণ দেন উমর কাজি।
পুলিশ জানায়, উমর কাজির ভাষ্য অনুযায়ী, আকিবকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য শনিবার বিকেলে কৌশলে তাকে নিজেদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান উমর কাজি। একপর্যায়ে পেছন থেকে হঠাৎ তিনি রশি দিয়ে আকিবের গলা চেপে ধরেন। এতে শ্বাসরোধ হয়ে আকিব মারা যায়। বাড়িতে কেউ না থাকায় লাশ খড় দিয়ে ঢেকে রেখে বিকেলে মাঠে ফুটবল খেলতে যান উমর।
ঘটনার দিন রাত ৯টার দিকে আকিবের বাবা থানায় জিডি করেন। রাত ১০টার দিকে ওসি আকিবদের বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় উমর কাজিও সবার সঙ্গে আকিবকে খোঁজ করেন। পুলিশের তৎপরতা দেখে লাশটি তিনি একাই প্লাস্টিকের বস্তার মধ্যে ভরেন। তখন আকিবের মুখ ঢাকতে নিজের গায়ের জামা ও গলার আঘাত ঢাকতে নিজের ব্যবহৃত গামছা পেঁচিয়ে লাশ বস্তাবন্দী করেন। পরে সেই বস্তা ধানখেতে ফেলে আসেন।
গতকাল সন্ধ্যায় উমর কাজি পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আশরাফুল আজিমের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করেন। পরে তাঁর জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করা হয়।
হত্যাকারী উমরের কথা জানতে পেরে আকিবের মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘হায় রে বেইমান প্রতিবেশী। আমারা বিপদে পরলে কই থাইকা আমগরে সহযোগিতা করব। তার বিপরীতে আমার বুকের ধনডারে মাইরা ফালাইছে।’ তিনি ছেলে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।