ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আতঙ্কে রোহিঙ্গারা
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আতঙ্কে রয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দারা। এসব শিবিরে দুর্যোগের সময় আশ্রয় নেওয়ার জন্য কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক রোহিঙ্গা দলনেতা (মাঝি)। প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশপাশের স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মাদ্রাসাগুলো।
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় বুলবুল শনিবার মধ্যরাতে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক ভর করেছে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের মধ্যে। তবে এ দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গতকাল শুক্রবার বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান, লেদা, নয়াপাড়া ও জাদিমোরা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কয়েকটি স্থানে সতর্কসংকেতের পতাকা উড়ানো হয়েছে। অনেকে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময় মোকাবিলায় নিত্যপ্রয়োজনীয়সামগ্রী মজুত করছেন।
রোহিঙ্গারা জানান, তাঁদের অধিকাংশ বসতঘর ত্রিপল, বাঁশের বেড়ায় তৈরি। জোরে বাতাস বইলেই এসব ভেঙে পড়তে পারে।
শালবন শিবিরের মুখে কথা হয় জামালিদা বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে। তিনি একটি কলসি ও একটি জারিকেনভর্তি পানি নিয়ে তাঁর ঘরে ফিরছিলেন। জামালিদা বেগম বলেন, ঘূর্ণিঝড় হলে খাবার পানির সংকট হতে পারে। এই জন্য পানি সংগ্রহ করে রাখছেন।
একই শিবিরের বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, ‘ঝড়ের নাম শুনলেই ভয় লাগে। বাতাসের শুরুতে ত্রিপল ছিঁড়ে যায়। ছেলেমেয়েদের নিয়ে শঙ্কায় থাকি। এখানে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করলেও কোনো ধরনের আশ্রয়কেন্দ্র নেই।’
টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম ও জাদিমোরা শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে দলনেতা (মাঝি) ছৈয়দুল আমিন বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানতে পারে, এমন আশঙ্কায় শিবিরে মাইকিং করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মাহাবুব আলম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। শিবিরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রেডক্রস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দমকল বাহিনীসহ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মীসহ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীরাও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছেন। পাশাপাশি শিবিরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কসংকেতের পতাকা তোলা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সকালে স্ব স্ব রোহিঙ্গা শিবিরে বৈঠক করা হয়েছে। শিবিরের মসজিদে মাইকিং করে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় তিন হাজারে বেশি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত আছেন। শিবিরে আশ্রয়কেন্দ্র না থাকলেও আশপাশের স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মাদ্রাসাগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সরানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাদের সেখানে নেওয়া হবে।