ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নতুন কৌশলে ছিনতাই-ডাকাতি
২২ অক্টোবর রাত সাড়ে নয়টা। নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন তরিকুল ইসলাম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম শহরে। পথে মিরসরাইয়ের ছোট কমলদহ এলাকায় এলে তাঁর চলন্ত গাড়িতে একটি লোহার রড ছুড়ে মারা হয়। বিকট শব্দ শুনে গাড়ি থামালে মুহূর্তেই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁকে ঘিরে ধরে কয়েকজন যুবক। কিলঘুষি দিয়ে নিয়ে যায় তাঁর সঙ্গে থাকা তিন লাখ টাকা, তিনটি মুঠোফোন, লাগেজ ও হাতঘড়িটি। এ ঘটনায় সেই রাতেই অজ্ঞাত সাত-আটজনের বিরুদ্ধে মিরসরাই থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন তরিকুল ইসলাম।
২৩ অক্টোবর বেলা দেড়টা। বারইয়ারহাট পৌর বাজারের বেসরকারি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দুই লাখ টাকা তুলে বাসে করে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ফিরছিলেন বেকারি ব্যবসায়ী মোর্শেদ আলম। পথে মিরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকায় এলে একটি মাইক্রোবাস তাঁকে বহনকারী বাসটির গতিরোধ করে। ইংরেজিতে র্যাব লেখা পোশাক পরা দুই ব্যক্তি বাসে উঠে তাঁকে মাদক ব্যবসায়ী বলে হাতকড়া পরিয়ে পেটাতে পেটাতে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাঁর সঙ্গে থাকা দুই লাখ টাকা ও দুটি মুঠোফোন নিয়ে হাত-পা বেঁধে কুমিল্লা জেলার চিওড়া এলাকায় ফেলে যায় তাঁকে। এ ঘটনায় ২৪ অক্টোবর জোরারগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এই দুই ঘটনার মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা। জাতীয় মহাসড়কটির ২৮ কিলোমিটার এলাকায় গত দেড় মাসে এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তবে ঝামেলা এড়াতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনার শিকার অনেকেই থানায় অভিযোগ করতে যান না। মহাসড়কে হঠাৎ এমন ছিনতাই-ডাকাতি বাড়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুলিশও। এ বিষয়ে মহাসড়কে চালক ও যাত্রীদের সচেতন থাকতে কয়েক দিন আগে মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ দুই থানার পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়েছে।
সতর্কবার্তাটিতে চালকদের রাস্তায় পড়ে থাকা দড়ি ও গাড়ির মূল্যবান কোনো যন্ত্র পড়ে থাকতে দেখলে তা নিতে গাড়ি না থামানো এবং যেখানে-সেখানে অনিরাপদ জায়গায় না থামতে বলা হয়। যাত্রীদের রাতের বেলায় ভ্রমণ করতে অপরিচিত ব্যক্তির মাইক্রোবাস বা অন্য যেকোনো ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার এবং রাস্তায় অপরিচিত লোকের দেওয়া খাবার খেতে নিষেধ করা হয়।
পুলিশ বলছে, এখন নতুন নতুন কৌশলে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। তিন মাস আগে মহাসড়কের নির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে তল্লাশিচৌকি তুলে দেওয়া, গ্রেপ্তার ডাকাতেরা বারবার জামিনে বের হয়ে আসা, ভোররাতে বৃষ্টি ও কুয়াশা পড়া ছিনতাই-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উপপরিদর্শক) সোহেল সরকার বলেন, ‘কিছুদিন ধরে মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বাড়ায় আমরাও উদ্বিগ্ন। অনিরাপদ জায়গায় গাড়ি থামানো এবং ভোররাতে বৃষ্টি ও কুয়াশার সুযোগ নেয় ডাকাত-ছিনতাইকারীরা। সড়কে টহল বাড়ানো হয়েছে। আগে থেকে আরও সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালন করছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানায় দেড় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছিনতাই, ডাকাতি ও ডাকাতিচেষ্টার ঘটনায় আটটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জোরারগঞ্জ থানায় পাঁচটি ও মিরসরাই থানায় তিনটি মামলা। এসব মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে ৩৪ জনকে। তাঁদের কয়েকজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা গাড়ি, ডাকাতি হওয়া টাকা, স্বর্ণালংকার, মুঠোফোন, অস্ত্রসহ বেশ কিছু মালামাল।
মিরসরাই থানার ওসি জাহিদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসড়কের মিরসরাই অংশে ডাকাতির ঘটনাগুলোতে ঘুরেফিরে একই নাম আসছে। তাঁদের বেশ কয়েকজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেনের গাড়ি ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত গ্রেপ্তার আশরাফুল (২০) ও শাহরিয়ার (২২) নামের দুই যুবক এই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাতে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের নোমান নামের এক যুবকের কথা বলেছেন তাঁরা। এখন আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মালবাহী ট্রাক চালান আবদুল কাইয়ুম। ছিনতাই-ডাকাতির বিষয়ে জানতে চাইলে এ চালক বলেন, ‘গাড়ি চালানোর সময় ভয়ে থাকি কখন কী হয়ে যায়।’