ইলিশ ধরায় 'সহযোগী' পুলিশ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় গোয়ালন্দ ঘাট থানা ও দৌলতদিয়া নৌ-ফাঁড়ির পুলিশের সহযোগিতায় জেলেরা ইলিশ শিকার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলেরা বলেন, পুলিশকে নৌকাপ্রতি প্রতিদিন ৫০০ টাকা দিয়ে তাঁরা নদীতে নামছেন।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইলিশ মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে মৎস্য বিভাগ ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরায় ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ৭৫ জনকে আটক করা হয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল শরীফ বলেন, অর্থ বরাদ্দ কম, সঙ্গে লোকবলসংকট। এ ছাড়া রয়েছে পুলিশের সমন্বয়হীনতা। গোয়ালন্দ থানা ও নৌ-ফাঁড়ি পুলিশ ইচ্ছেমতো অভিযান চালায়। থানার পুলিশ কলাবাগান এলাকার বেশ কিছু নৌকা থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করে বলে জানতে পেরেছেন। যার ফলে ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও উজানচর এলাকায় খোঁজ নিয়ে গেছে, মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন নদীতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। এ অবস্থায় গোয়ালন্দ ঘাট থানা ও দৌলতদিয়া নৌ-ফাঁড়ি পুলিশ অভিযানের আগেই জেলেদের খবর দিয়ে দেয়। এ জন্য এলাকার জেলেদের ৮৪টি নৌকা থেকে ৫০০ টাকা হারে টাকা নিয়েছে তারা।
স্থানীয় লোকজন বলেন, দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার নদীর পাড়ে জেলেরা অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। দৌলতদিয়ার কলাবাগান, উজানচরের মহিদাপুর, দেবগ্রামের অন্তারমোড়ে জেলেরা জড়ো হন। অভিযানকারী দল যখন নদীতে অভিযানে নামে, তখন তাঁরা কিছু নির্দিষ্ট নালায় নৌকা নিয়ে লুকিয়ে পড়েন।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশের একটি দল মৎস্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে নদীতে নামে। তারা তিনজন জেলেকে আটকের পর তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়। এক জেলে বলেন, নৌ-পুলিশ জাল ও ইলিশও জব্দ করে। পরে ৯ হাজার টাকা নিয়ে তাঁদের তিন জেলেকে ছেড়ে দেয়।
দৌলতদিয়ার একাধিক জেলে বলেন, তাঁরা ১৯ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি নৌকা থেকে ৫০০ টাকা হারে চাঁদা তুলে প্রতিদিন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসিকে ৩০ হাজার করে টাকা দেন।
>নৌ-পুলিশের একটি দল গতকাল প্রশাসনকে না জানিয়ে নদীতে নামে
তারা তিনজন জেলেকে আটক করে টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়
দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লাবু মিয়া বলেন, সব সময় মৎস্য বিভাগ ও উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানিয়ে অভিযানে যান। গতকাল জরুরি খবর পেয়ে সেখানে একটি দল যায়। বিষয়টি কমিশনারকে জানানো হয়েছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে সরাতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ ধরনের অভিযোগ করেছে। টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সমন্বয়ক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরকে থানা বা নৌ-পুলিশকে সহযোগিতা করার কথা। কিন্তু উল্টো তারাই না জানিয়ে নিজেরা নদীতে নামছে, বিষয়টি দুঃখজনক। এ ছাড়া থানা এবং নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে জেলেদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।