ফারুকের 'ক্যাশিয়ার' যুবলীগ থেকে বাদ
তিন সপ্তাহ ধরে সংগঠন থেকে দূরে রয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। সংগঠনের সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সভায়ও কাল উপস্থিত ছিলেন না তিনি। তাঁর বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় সভায়। বিকল্প কাউকে তাঁর দায়িত্বে চান নেতারা। কিন্তু এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই তাঁদের। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা চাইবেন তাঁরা।
এদিকে পিয়ন থেকে যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক হয়ে বিত্তবৈভব গড়ে তোলা কাজী আনিসুর রহমানকে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে গতকাল দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি এখন পলাতক রয়েছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর এই প্রথম গ্রেপ্তারের আগেই যুবলীগের কাউকে বহিষ্কার করা হলো। এর আগে গ্রেপ্তারের পর বহিষ্কৃত হয়েছেন যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট ও এনামুল হক ওরফে আরমান। তাঁরা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি–বাণিজ্যের নামে টাকা আয় করেছেন দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান। তাঁর তো পদ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তিনি ছিলেন ওমর ফারুকের ঘনিষ্ঠ, নেতা-কর্মীরা তাঁকে যুবলীগ চেয়ারম্যানের ‘ক্যাশিয়ার’ বলে জানেন। ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের দায় যুবলীগের চেয়ারম্যানেরও। তাঁর আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এসব হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেন সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা। এতে ১৯ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় ক্যাসিনো–কাণ্ড ও যুবলীগ নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অধিকাংশ নেতা। অনেকেই উত্তেজিত হয়ে বলেন, যুবলীগের এ পরিস্থিতির জন্য চেয়ারম্যানের দায় সবচেয়ে বেশি। ইতিমধ্যেই তিনি বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় দায়িত্ব পালন না করলে পদত্যাগ করতে পারেন। সংগঠনের কাজ তো আটকে থাকতে পারে না। নেতৃত্বসংকট এড়াতে কাউকে না কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত চারজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাঁরা জানান, চেয়ারম্যান ছাড়া সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেছেন কয়েকজন। ক্যাসিনো বা দুর্নীতিতে জড়িত নেতাদের বিষয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটি গঠন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতির দায়িত্ব কাউকে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটকে বহিষ্কারের পর পাঁচ দিন ধরে কাউকে তাঁর পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এসব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে যুবলীগের সাংগঠনিক নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাওয়া হবে। অনুমতি পেলে সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে যাবেন।
এ বিষয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, চেয়ারম্যানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই সভাপতিমণ্ডলীর। আরও কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি সভায়। এ ক্ষেত্রে সাংগঠনিক নেতার নির্দেশনা ছাড়া কিছু করার নেই। কাজী আনিসুর রহমানের মতো আরও কিছু নেতাকে বহিষ্কার করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান তিনি।
যুবলীগ সূত্র জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর উত্তরার কয়েকটি ওয়ার্ডের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান। এরপর থেকে তাঁকে আর যুবলীগের কার্যক্রমে দেখা যায়নি। ৩ অক্টোবর ওমর ফারুকের ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৬ অক্টোবর সরকারের অনুমতি ছাড়া তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শহীদ সেরনিয়াবাত, শেখ শামসুল আবেদীন, মাহবুবুর রহমান ওরফে হিরন, আলতাফ হোসেন ওরফে বাচ্চু, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেনসহ অনেকেই। চলমান অভিযানের মধ্যে আলোচনায় আসা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী ওরফে শাওন সভায় উপস্থিত ছিলেন না। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সভায় সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।