বাবুবাজারে ফায়ার স্টেশনের জায়গাই ঠিক হয়নি
পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর বাবুবাজারে এক সপ্তাহের মধ্যে ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। আর স্টেশনের স্থাপনা তৈরির প্রতিশ্রুতি দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু এখনো স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। এমনকি জায়গাই ঠিক করা হয়নি। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে, তা–ও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বাবুবাজার সেতুসংলগ্ন আরমানিটোলায় রাসায়নিক, ইসলামপুরে কাপড়, নয়াবাজারে কাগজের বড় পাইকারি বাজার। এসব এলাকায় মাঝেমধ্যেই ছোটখাট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা এখানে নেই।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন মারা যান। ওই ঘটনায় দগ্ধ আরও কয়েক শ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনার পর গত ৩০ মার্চ আরমানিটোলায় আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘অগ্নিপ্রতিরোধ সচেতনতা’ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাবুবাজার সেতুর নিচে একটি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের দাবি জানান আরমানিটোলা সমাজকল্যাণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। তখন বাবুবাজারে একটি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হালিম।
গত ৮ এপ্রিল আরমানিটোলায় রাসায়নিক সংকট ও সমাধান নিয়ে পৃথক আরেকটি আলোচনা সভা হয়। ওই সভায় এক সপ্তাহের মধ্যে বাবুবাজার সেতুর নিচে ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরুর ঘোষণা দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর শাকিল নেওয়াজ। সে সময় ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন স্টেশনের স্থাপনা তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
>গত ৮ এপ্রিল এক সপ্তাহের মধ্যে ফায়ার স্টেশনের নির্মাণকাজ শুরুর ঘোষণা আসেৎ
কিন্তু এখনো জায়গাই নির্ধারণ করা হয়নি
আরমানিটোলা সমাজকল্যাণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, বাবুবাজার সেতুর নিচে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা আছে। এই জায়গা থেকে খুব সহজেই চারদিকে (ইসলামপুর রোড, মিটফোর্ড রোড, বেড়িবাঁধ ও নয়াবাজার) যাওয়া যায়। তাই সেতুর নিচে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করতে ফায়ার সার্ভিসকে অনুরোধ জানান তাঁরা। তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতিও মেলে। কিন্তু তারা এখনো কাজ শুরু করেনি। কবে করবে বা আদৌ করবে কি না, তা–ও জানা যাচ্ছে না।
বাবুবাজার সেতুর নিচের কোন অংশে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হবে, তা–ও এখনো নির্ধারণ করেনি ফায়ার সার্ভিস ও ডিএসসিসি।
দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় থেকে বাহার শাহ মাজার পর্যন্ত বাবুবাজার সেতুর নিচে ফায়ার স্টেশন করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা আছে। কিন্তু এখন সেখানে ট্রাক, পিকআপ, ভ্যানগাড়ি পার্ক করে রাখা হয়। এ ছাড়া ৭টি ভাতের হোটেলসহ প্রায় ২০টি চায়ের দোকান গড়ে তোলা হয়েছে।
মিটফোর্ড রোডের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, রাজধানীর অন্যান্য এলাকা থেকে পুরান ঢাকা অনেক ঘিঞ্জি। রাস্তাগুলো সরু। দিনভর যানজট লেগে থাকে। আগুন লাগলে দুর্ঘটনার সময় দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারে না। অপরিকল্পিত এই এলাকায় পানি মজুতেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ কিছুদিন পরপরই এই এলাকায় ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত সপ্তাহেও ইসলামপুরে একটি কাপড়ের গুদামে আগুন লেগেছিল। এসব কারণে বাবুবাজারে ফায়ার স্টেশন খুবই জরুরি।
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ওই জায়গায় ফায়ার স্টেশনের স্থাপনাটি ডিএসসিসির করে দেওয়া কথা। কিন্তু তারা এখনো তা করেনি। স্থাপনাটি বুঝে পেলে এক দিনের মধ্যেই পর্যাপ্ত জনবল, পানির গাড়িসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি দেওয়া যাবে।
ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘোষণা দেওয়ার কিছুদিন পরই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন। এতে সময়মতো ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এখন অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলে নির্মাণকাজ শুরু করব।’