অভিযানের উদ্দেশ্য, ব্যাপ্তি ও গন্তব্য অজানা
সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর দলের যৌথ সভায়। এর এক সপ্তাহ পর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। সমালোচনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের দুই নেতার। এর পাঁচ দিন পর মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের পর যুবলীগকে ধরেছি। একে একে সব ধরব। সমাজের অসংগতি দূর করব।’
১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর ১১ দিন পূর্ণ হয়েছে গতকাল শনিবার। কিন্তু অভিযানের উদ্দেশ্য, এর সম্ভাব্য ব্যাপ্তি ও গন্তব্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মতো আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অন্ধকারেই আছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলোও পরিষ্কারভাবে কিছু বলছে না। হঠাৎ অভিযানের কারণ নিয়ে যেমন জল্পনাকল্পনা আছে, তেমনি অভিযান শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নবিরোধী হবে, নাকি ক্যাসিনো-জুয়ার বৃত্তে আটকে থাকবে, তা নিয়ে কৌতূহল আছে।
এ প্রশ্ন ওঠার কারণ হলো, এই সময়ের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের সাত জায়গায় অভিযান চালানো হলেও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগের নেতা জি কে শামীম, কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ও মোহামেডান ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ছাড়া উল্লেখযোগ্য কেউ গ্রেপ্তার হননি। যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট আলোচনার কেন্দ্রে থাকলেও তিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অভিযানের সঙ্গে যুক্ত র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশন শেষে দেশে ফেরার পর অভিযানের গতি–প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। তার আগ পর্যন্ত অভিযান যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে। যাঁদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাঁরা গ্রেপ্তার হলে ক্ষমতাসীন দলের অনেকের নাম বেরিয়ে আসবে। তাই ঝুঁকি নিতে চাইছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে কোনো কোনো অভিযানের ধরন নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। বিশেষ করে থেমে থেমে অভিযান চালিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। যেমন ২৩ সেপ্টেম্বর সূত্রাপুরে দুই ভাই এনামুল ও রূপনের বাড়িতে অভিযান চালানোর আগেই তাঁরা পালিয়ে যান। সেখানে চারটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে ছয় সিন্দুকভর্তি ৫ কোটি ৪ লাখ টাকা ও ৭২০ ভরি স্বর্ণালংকার পায় র্যাব।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, দেরিতে হলেও শুদ্ধি অভিযানের উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ দিতে চান। তবে তাঁর শঙ্কা, উদ্বেগও রয়েছে। সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতি, ভূমি ও নদী দখল, ধর্ষণ, অপহরণ, গুম করে দেওয়ার মতো অপরাধগুলো অপ্রতিরোধ্যভাবে ঘটে চলেছে এবং এগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীনেরা জড়িত বলে অভিযোগ আছে। তাঁর প্রত্যাশা ছিল, এগুলোর বিচার হবে এবার। কিন্তু ক্যাসিনো বৈধ না অবৈধ; জুয়া, বিউটি পারলার চলবে কি চলবে না—অভিযানটা এই কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। এসব জায়গায় অভিযানের চিত্র তৈরি করা হচ্ছে। অনেক গভীরে অপরাধের যে বীজ ছড়িয়ে গেছে, তা উপড়ে ফেলার সুযোগ হেলায় হারালে এবার পরিণতি ভয়াবহ হবে।
অভিযান নিয়ে যত কথা
অভিযানের প্রতি সমর্থন রয়েছে বেশির ভাগ মানুষের। এই অভিযান কত দূর যায়, সেদিকে নজর রাখছেন সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা-কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, দলের মন্ত্রীরা অভিযান নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে নানা রকম কথা বলছেন। আদতে তাঁরা এ বিষয়ে খুব ভালো জানেন না। অভিযান কতটা নির্মোহভাবে পরিচালিত হবে, তা-ও সবাই বুঝতে পারছেন না। সে কারণে দলীয় প্রধানের কঠোর অবস্থানের পর যেভাবে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামা দরকার ছিল, সেভাবে নামেননি। এ সময়ে প্রতি ওয়ার্ডে ‘ভাই’রা কী কী অপকর্মে জড়িত ছিলেন, সেটা প্রকাশ করা জরুরি ছিল। সে পথে কেউ হাঁটছেন না। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছেন। নেতা-কর্মীদের কারও কারও ধারণা, যুবলীগের নিয়ন্ত্রক এক শীর্ষ নেতাকে সতর্ক করার জন্যই এ অভিযান। আবার কেউ কেউ বলছেন, একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুবলীগের নিয়ন্ত্রকদের ঝামেলা থেকে অভিযানের সূত্রপাত।
১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে অভিযানের শুরু। একই দিনে ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। র্যাব জানায়, ক্লাবের ভেতরে ক্যাসিনো চলছিল। পরবর্তী কয়েক দিনে ঢাকার ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনোর কারবার কীভাবে জেঁকে বসেছে, তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জানা যায়, একেকটি ক্লাবে ক্যাসিনো-কারবার থেকে প্রতি রাতে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা আয় হতো। এই টাকা প্রধানত যুবলীগের কয়েকজন নেতাসহ দলের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা ও পুলিশের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা হতো। ২০১৭ সাল থেকেই পুলিশ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ক্যাসিনো চালানোর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানত। এমনকি ক্যাসিনোয় ব্যবহৃত সরঞ্জাম বাংলাদেশে বৈধভাবেই এসেছে। বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) জানত। ক্যাসিনোর যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে—এমন ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। আবার ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো পরিচালনার কারিগরি দিকগুলো দেখতেন শতাধিক নেপালি নাগরিক। পুলিশ সূত্র বলছে, এসব বিদেশি ভ্রমণ ভিসায় এসে দিনের পর দিন জুয়া পরিচালনার কাজ করেছেন। আবার অভিযানের মধ্যেই তাঁরা কীভাবে পালিয়ে যেতে পারলেন, সে প্রশ্নও উঠেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের লোক তাঁদের সহায়তা করেছে, এই তথ্যও এখন আর কারও কাছে গোপন নয়।
জানা যায়, ঢাকার ক্যাসিনোগুলোর নিয়ন্ত্রক ছিলেন ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট। তাঁর সহযোগী হিসেবে নাম আসে সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কাউন্সিলর ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক ওরফে সাঈদ, যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক ওরফে আরমান, নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের ব্যক্তিগত সচিব মিজানুর রহমান ও ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম রবিউল ইসলাম ওরফে সোহেল প্রমুখ। ক্যাসিনো কারবারের বাইরে ঠিকাদারি থেকে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়া জি কে শামীম গ্রেপ্তার হন। আলোচনায় আসে সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী ওরফে শাওন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, সূত্রাপুরের আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার নাম। কাদের ছত্রচ্ছায়ায় তাঁরা অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন, তা নিয়েও পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী, ইসমাইল হোসেন ও জি কে শামীমের দেহরক্ষীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে।
চেষ্টা করেও এ বিষয়ে সম্রাটের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর অন্যতম সহযোগী মমিনুল হক গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কাউকে বাসা থেকে ধরে এনে ক্যাসিনো খেলতে বাধ্য করেননি। তাঁর ধারণা, কোনো কারণে তাঁদের সরিয়ে কোনো বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। সামনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আছে। তাঁদের বিরোধীপক্ষ এই অভিযানে ইন্ধন দিচ্ছে। বেশি বেশি করে তিনিসহ কয়েকজনের নাম বলছে। অভিযান সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন মমিনুল। তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটেরা এবং বালিশ-কাণ্ডের নায়কেরা কি এই অভিযানের আওতামুক্ত? কেন শুধু স্পোর্টিং ক্লাবের দিকে নজর? রাজধানীর বেশ কিছু ক্লাবে সদস্যপদ পেতে কোটি টাকা খরচ করতে হয়। এখানে কোটি টাকা দিয়ে কারা সদস্যপদ পাচ্ছেন? তাঁরা ক্লাবে কী করেন?
সব অভিযান কি জরুরি ছিল
র্যাবের পাশাপাশি অভিযানে নেমেছে পুলিশও। তবে আগের যেকোনো অভিযানের মতো এ দফায়ও র্যাব-পুলিশের মধ্যে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট। চলমান অভিযানকে ‘জুয়া-মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ’বিরোধী অভিযানে রূপ দেওয়ার একটা চেষ্টা পুলিশের পক্ষ থেকে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। আইন প্রয়োগে কোনো ত্রুটি থাকলে বা পুলিশ কোনো অপেশাদারি আচরণ করলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ আছে।
২১ সেপ্টেম্বর পুলিশ বগুড়ার ১২৩ বছরের পুরোনো টাউন ক্লাবে অভিযান চালায়। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামীম কামাল বলেন, তাঁর বয়স ৬০ এবং তিনিই ক্লাবের কনিষ্ঠ সদস্য। ঘটনার দিন ‘মিনি ক্যাসিনো’ চালানোর দায়ে এই ক্লাব থেকে ৬০ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ১৫ জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তাঁদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা জব্দ করে। পরদিন আদালত তাঁদের জামিন দেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জানামতে কোনো অন্যায় হয়নি। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা জুয়া খেলছিলেন। টাকার অঙ্ক কম-বেশি কোনো বিষয় নয়। অঙ্ক যা-ই হোক না কেন, শাস্তির পরিমাণ একই।
তবে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শামীম কামাল কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, যাঁদের ওই রাতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তাঁরা অবসরপ্রাপ্ত এবং ৫০-১০০ টাকার বেশি কখনোই তাঁদের হাতে থাকে না। তাঁদের ছেলেমেয়েরা ক্লাবে সন্ধ্যার দিকে নামিয়ে দিয়ে যান। তাঁরাই সঙ্গে করে নিয়ে যান। তাঁরা কোনো অন্যায় করেননি।
২৬ সেপ্টেম্বর লালবাগ বিভাগের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে খবর দিয়ে অভিযানে বের হন যে সিদ্দিকবাজারে জুয়ার বোর্ড বসেছে, অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। পরে তাঁরা সেখান থেকে ৫০টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করেন।
এর আগে গুলশানের একটি ভবনে তিনটি স্পা ও লাইফস্টাইল ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১৬ জন নারী ও দুজন পুরুষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয়। এজাহারে পুলিশ লেখে, এসব ক্লাবে স্পার আড়ালে নারীদের বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে যৌনকর্মে বাধ্য করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার নারীরা ঘটনার শিকার, নাকি অপরাধের সঙ্গে জড়িত, এমন প্রশ্নে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) স ম কাইয়ূম বলেন, এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া শাখা কথা বলবে। তিনি কিছু বলতে চান না।
গ্রেপ্তার নারীদের আইনি সহযোগিতা দিচ্ছেন আইনজীবী জসিমউদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এজাহারে পুলিশ দাবি করেছে, অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের হাতেনাতে ধরা হয়েছে। আমি আদালতে বলেছিলাম, এতজন নারী কী অসামাজিক কাজ করছিলেন, তা পুলিশ পরিষ্কার করতে পারেনি। এর ভিত্তিতেই আদালত নারীদের জামিন দিয়ে দেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়া রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বড় অপরাধ ও ছোট অপরাধের মধ্যে পুলিশ হয়তো পার্থক্য করতে পারছে না। তা ছাড়া, যা কিছু ঘটেছে, তা কোনো কোনো রাজনীতিকের সঙ্গে পুলিশ ও অন্যান্য পক্ষের যোগসাজশে ঘটেছে। প্রতিটি পক্ষই একে অন্যকে বাঁচানোর চেষ্টা করে থাকতে পারে। বড় অপরাধ থেকে মদ-জুয়া-স্পার আড়ালে তথাকথিত যৌন অপরাধের দিকে নজর ঘুরিয়ে দিতে পারলে সব পক্ষই লাভবান হতে পারে। এ চিন্তা থেকেও এসব অভিযান হতে পারে।
ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির বিষয়টা চাপা পড়ে গেল বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া চাঁদাবাজির শাস্তি হতে পারে না। ক্যাসিনো-জুয়া খেলা থেকে অনেক অপতৎপরতার শুরু হয় সত্য। তবে দুর্নীতি-অনাচারের আরও অনেক বিস্তৃতি ঘটেছে। অভিযান শুধু ক্যাসিনোকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অভিযান আরও পরিকল্পিত হওয়া দরকার।