শামীমের দেহরক্ষী বিডিআর বিদ্রোহে চাকরিচ্যুত
ক্যাসিনো–কাণ্ডে গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীমের (জি কে শামীম) এক দেহরক্ষী বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় চাকরিচ্যুত হন। আরেকজন চাকরিচ্যুত হন সেনাবাহিনী থেকে। এই দুজনসহ সাত দেহরক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীমকে ২১ সেপ্টেম্বর তাঁর নিকেতনের কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। একই সঙ্গে তাঁর সাত দেহরক্ষীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় শামীমের কার্যালয় থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্র, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরি ডলার, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদের বোতল জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায়, শামীম গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কারও কাজ পাওয়া ছিল দুরূহ। সরকারি বড় সব কাজ ছিল তাঁর কবজায়। শামীম চলতেন আগে–পিছে দেহরক্ষী নিয়ে। সার্বক্ষণিক সঙ্গে থাকত অস্ত্রধারী ছয় দেহরক্ষী।
শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তিনি এখনো ডিবি হেফাজতে আছেন। র্যাব সূত্র জানায়, জি কে শামীমকে গ্রেপ্তারের পরদিন কিছু লোক মোটা অঙ্কের চেক নিয়ে ব্যাংকে আসেন টাকা তুলতে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ খবর জানার পরই শামীমের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে যাঁরা তাঁর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের নমিনি তাঁদেরও হিসাব জব্দ করে দেওয়া হয়। দেহরক্ষীদের কয়েকজনও তাঁর ব্যাংক হিসাবের নমিনি বলে জানা গেছে।
শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তাঁর দেহরক্ষীদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলায়। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে এলাকা ছেড়ে আসা দেলোয়ার একটি ব্যাংকের প্রহরী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। কিছুদিন পর সেটা ছেড়ে শামীমের সঙ্গে যোগ দেন। শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তাঁর আয় বেড়ে যায়। মুদিদোকানি বাবা পাকা বাড়ি করেন।
বিডিআর বিদ্রোহের পর বিভাগীয় ব্যবস্থায় চাকরিচ্যুত হয়েছেন যশোরের কোতোয়ালির বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম। চাকরি হারিয়ে কিছুদিন বাড়িতে বসে ছিলেন। পরে যোগ দেন জি কে শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে। ভোলার কামাল হোসেনও বিডিআর থেকে অবসর নিয়ে শামীমের সঙ্গে যোগ দেন। তাঁর নামেও অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল।
আরেক দেহরক্ষী বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের আমিনুল ইসলাম এলাকায় পরিচিত রাকিব তালুকদার নামে। ঘেরের কাজ করা শ্রমিক আমিনুল ঢাকায় কী করতেন, কেউ জানে না। কয়েক মাস আগে এলাকায় গিয়ে নিজের নামে অস্ত্রের লাইসেন্স করেন। এ জন্য তদবির করেন জি কে শামীম।
সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত সৈনিক গোপালগঞ্জের মুরাদ হোসেন এলাকায় গিয়ে অস্ত্রের লাইসেন্স করেন। সেই লাইসেন্স নিয়ে তিনি জি কে শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে যুক্ত হন। নীলফামারীর কামাল হোসেন তিন বছর আগে শামীমের সঙ্গে যুক্ত হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জি কে শামীমের কয়েকজন দেহরক্ষীর নামে ছিল অস্ত্রের লাইসেন্স। অথচ অস্ত্র বিধিমালা অনুসারে নিজের নামে থাকা অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে অন্যকে পাহারা দেওয়া যায় না। এতে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।
সিআইডির প্রতিবেদন
জি কে শামীমের রিমান্ড প্রতিবেদনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলেছে, তিনি একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক এবং জুয়া ব্যবসায়ী (ক্যাসিনো) হিসেবে পরিচিত।
শামীমের সাত দেহরক্ষীকে মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় গ্রেপ্তারের জন্য আদালতে করা আবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার শামীমসহ তাঁর সাত দেহরক্ষীকে গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদ।
সিআইডি কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী তাঁর সাত দেহরক্ষীকে মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর অনুমতি দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদনে উল্লেখ করেন, শামীম তাঁর দেহরক্ষীদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে নিজ নামে লাইসেন্স করা অস্ত্র প্রকাশ্যে বহন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করে লোকজনের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে আসছিলেন।
{প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা}