মেয়াদ বাড়ে, কাজ শেষ হয় না
চট্টগ্রাম নগরের যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান ছয় প্রকল্পের অগ্রগতি খুবই কম। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হচ্ছে না। ফলে প্রত্যাশিত সুফল পেতে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) গত ছয় বছরের বিভিন্ন সময়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ১৪ হাজার ১০৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এই ছয়টি প্রকল্পে সরকার অর্থায়ন করছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সর্বনিম্ন ১৭ থেকে সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ। ইতিমধ্যে তিনটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বাকি তিনটিরও মেয়াদ বাড়ানো হবে।
অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প গ্রহণ, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রণয়নে অদক্ষতা, ভূমি অধিগ্রহণ ও নকশা প্রণয়নে জটিলতা, নির্মাণকাজ শুরুর পর নকশা পরিবর্তন, বর্ষাকাল, জনবল সংকটের কারণে প্রকল্পগুলোর কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
সিডিএর প্রকল্পগুলোর ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান প্রথম আলোকে বলেন, সিডিএ কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রকল্পগুলো নিয়েছে। এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি। তাই এখন মাঝপথে প্রকল্পের মন্থর গতির জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, নকশা প্রণয়ন জটিলতাসহ বিভিন্ন অজুহাত তোলার সুযোগ নেই। এ জন্য সিডিএকেই একক দায় বহন করতে হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতার বিষয়টি অস্বীকার করে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস প্রথম আলোকে বলেন, একেকটি প্রকল্পে একেক ধরনের সমস্যা। এসব প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়। তারপরও দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা রয়েছে।
সিডিএ সূত্র জানায়, ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড প্রকল্পের এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৮০ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের জুনে। এরপর চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এরপরও কাজ শেষ হয়নি। এখন আগামী বছরের জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা সময় বর্ধিত করা হয়েছে।
ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক পর্যন্ত নতুন সড়কের কাজ গত বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু অগ্রগতি কম থাকায় মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে দাবি করেছে সিডিএ। আর নগরের সিরাজউদ্দৌলা সড়ক থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক পর্যন্ত নতুন সড়কের মেয়াদ গত জুনে শেষ হলেও কাজ হয়েছে ৬৭ শতাংশ।
চলমান আরও তিনটি প্রকল্পের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ২৪ শতাংশ। এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরের যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসন। এতে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
নগরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মেয়াদ আগামী বছরের জুনে শেষ হবে। ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ হয়েছে ১৮ শতাংশ। এখন নকশা সংশোধন করে ওঠা-নামার স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। যানজট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নগরের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ সাময়িক বন্ধ থাকবে।
চট্টগ্রাম নগরের দীর্ঘদিনের সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। নগরবাসী বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে ভুগলেও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১৭ শতাংশ। ফলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক আহমদ মঈনুদ্দিন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। এরপর নকশা চূড়ান্ত করতেও সময় লেগেছে। সংশোধিত প্রকল্পে সময় ও ব্যয় বাড়ানো হবে।