এক নারায়ণগঞ্জেই এত অস্ত্র
নারায়ণগঞ্জে একসময় শিল্পকারখানা, ব্যাংক ও পুঁজিপতিরা অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য। বিগত শতাব্দীর আশির দশক পর্যন্ত এই ধারা চলছিল। এরপর সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক, তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা চিহ্নিত সন্ত্রাসীরাও অস্ত্র রাখার লাইসেন্স পান, যা বিভিন্ন সময়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলায় ব্যবহার হতে দেখা যায়।
চলতি বছরের ৩০ জুলাই পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এই জেলায় এখন মোট অস্ত্রের লাইসেন্সের সংখ্যা ১ হাজার ১টি। এর মধ্যে বন্দুক ও শর্টগান ৫৯২টি, পিস্তল ২৫০টি, রিভলবার ৯৫টি ও ৬৪টি রাইফেল। বিভিন্ন সময়ে বাতিল হয়েছে ৩২টির মতো অস্ত্রের লাইসেন্স। এটা বাদ দিয়েই বর্তমান সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারি বাহিনী থাকার পরও কেন এখানে এত অস্ত্রের লাইসেন্স দিতে হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আবার প্রভাবশালী বা সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি ও সন্ত্রাসীদের অনেকের কাছে অস্ত্রের লাইসেন্স যাওয়ায় তা নিয়ে উদ্বেগ আছে নাগরিক সমাজে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদও মনে করেন, এখানে অস্ত্রের লাইসেন্সের সংখ্যা আরও সীমিত হওয়া উচিত। কারণ, যেনতেন মানুষও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স বের করে নিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সঠিক ব্যক্তিরা যাতে লাইসেন্স পায়, তা তদন্তের সময় বিবেচনা করা হয়। ভবিষ্যতেও তা করা হবে।
বিগত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে যত অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অতীতে মূলত ব্যাংক ও বড় শিল্পকারখানার নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যেমন ১৯৬৫–৭০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন এই মহকুমায় ২০টি বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। সেগুলো দেওয়া হয় আদমজি পাটকলসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের নামে। এই ধারা অব্যাহত ছিল স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার এবং তারপর জিয়াউর রহমান সরকার আমলেও। এই দুই আমলে বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়া হয় যথাক্রমে ২৪টি ও ৮১টি।
রাজনীতিক ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অস্ত্র নেওয়ার প্রবণতা শুরু হয় বিগত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ দিক থেকে, যা পরবর্তী সরকারগুলোর আমলে ক্রমে বাড়তে থাকে। আর সন্ত্রাসী বা তাদের পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার শুরু নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে। ২০১০ সালের পর সেটা আরও বেড়ে যায়।
এরশাদ সরকারের আমল থেকে বন্দুকের পাশাপাশি পিস্তল, রিভলবার ও পয়েন্ট টু টু বোর রাইফেলের লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত আছে। এরশাদের ৯ বছরে নারায়ণগঞ্জে ২০৬টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়; যার ২১টি হলো রাইফেল আর ৫০টি পিস্তল–রিভলবার। বাকিগুলো বন্দুক।
১৯৭২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের বাইরে ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, জনপ্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি। এরশাদ সরকারের শেষ দিকে নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তিও অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। এঁদের মধ্যে জাতীয় পার্টির দুজন, আওয়ামী লীগের চারজন, বিএনপির একজন ও জাসদের একজন রয়েছেন।
স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর ক্ষমতায় আসে বিএনপি। তাদের পাঁচ বছরে এ জেলায় ৮৯ জন অস্ত্রের লাইসেন্স পান। রাজনৈতিক–সংশ্লিষ্ট তেমন কেউ ছিলেন না। তবে সেলিম ওসমান (এখন জাতীয় পার্টির সাংসদ) তখন বন্দুকের লাইসেন্স নেন। অবশ্য বিএনপি ২০০১ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর তখনকার দলীয় সাংসদ গিয়াস উদ্দিন একটি পিস্তল ও একটি বন্দুকের লাইসেন্স নেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় আগের সরকারের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। ওই পাঁচ বছরে ২৩৮ জনকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ওই সময় নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত পায়।
নারায়ণগঞ্জে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, নব্বইয়ের দশক থেকে এখানে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিস্তার ঘটে। ১৯৯৬ সালে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিএনপির শেষ সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া ও গোলাগুলি করেছে। তখন ‘অস্ত্রমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত নারায়ণগঞ্জ চাই’ দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অস্ত্রমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত হয়নি। পরে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এর আরও বিস্তার ঘটে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে তখনো অস্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এখন এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’
ওসমান পরিবার ও ঘনিষ্ঠরা
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সাংসদ শামীম ওসমানসহ তাঁরা তিন ভাই অস্ত্রের লাইসেন্স নেন। শামীম ও সেলিম ওসমান পিস্তলের লাইসেন্স (সেলিম বিএনপি আমলে বন্দুকের লাইসেন্স নিয়েছিলেন) আর নাসিম নেন বন্দুকের। নাসিম ওসমান ২০১৪ সালে মারা যান। এখন তাঁর লাইসেন্স করা অস্ত্রটি কার হেফাজতে তা জানা যায়নি। তাঁর ছেলে আজমিরী ওসমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস–চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। তিনি আলোচিত ত্বকী হত্যা মামলার প্রধান সন্দেহভাজন।
আলোচিত–সমালোচিত ওসমান পরিবারের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ ক্যাডারদের নামেও অস্ত্রের লাইসেন্স আছে। এর মধ্যে শামীম ওসমানের মামাশ্বশুর জালাল উদ্দিন আহাম্মদের দুটি শর্টগান ও পিস্তলের লাইসেন্স আছে। জালাল উদ্দিন আবার সাত খুনের প্রধান আসামি নুর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। শামীম ওসমানের আত্মীয় ফয়েজ উদ্দিন আহমদও দুটি অস্ত্রের লাইসেন্সের মালিক। তিনি ত্বকী হত্যার আসামি তায়েফ উদ্দিনের (জ্যাকি) চাচা।
ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ আছে এমন ব্যক্তিরাও অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। এর মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা শাহ নিজাম, জোড়া খুনের মামলার আসামি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত নিয়াজুল ইসলাম, ডাকাতি মামলার আসামি আবদুল করিম ওরফে ডিশ বাবু, ২৫ মামলার আসামি মতিউর রহমান ওরফে সুন্দর মতি, ইব্রাহিম চেঙ্গিস, মো. শহীদুল্লাহ, রুহুল আমিন, রফিকুল ইসলাম ওরফে আন্ডা রফিক অন্যতম।
নারায়ণগঞ্জের অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের মধ্যে রাজনীতিক ও তাঁদের অনুগত হিসেবে যাঁদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের রয়েছেন ৪৮ জন। আর বিএনপির ২১ ও জাতীয় পার্টির ১১ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বড় অংশই আলোচিত ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ।
বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার
স্থানীয় লোকজন জানান, দুর্বৃত্ত হিসেবে ভাবমূর্তি আছে, এমন ব্যক্তিরা লাইসেন্স করা অস্ত্র সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করেন, যা মানুষকে সন্ত্রস্ত করে। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের ওপর হামলায় বা তুচ্ছ ঘটনাও বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার দেখা গেছে।
গত বছর ১৬ জানুয়ারি ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর সাংসদ শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালান। শামীমের ক্যাডার নিয়াজুল ইসলাম ও শাহ্ নিজামকে তখন প্রকাশ্যে পিস্তল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। শাহ্ নিজাম এর আগে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওই ছবি ছাপা হয়েছে।
আবদুল করিম ওরফে ডিশ বাবু ব্যাংকে টাকা জমা দিতে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে পাঁচটি গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এটা ছয়–সাত মাস আগের ঘটনা। গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবলীগ কর্মী সুমন আহমেদ মারা যান। এই মামলায় বলা হয়, কায়েতপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের লাইসেন্স করা পিস্তল থেকে ছোড়া গুলিতে সুমন মারা যান। যদিও রফিকুল ইসলাম এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, কেউ বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কয়েকজন সন্ত্রাসী বা ব্যক্তি, যাঁরা অস্ত্রটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন; এমন কয়েকজনের লাইসেন্স বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লেখা হয়েছে।
কুখ্যাত সন্ত্রাসীও লাইসেন্স পেল
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসে। টানা দুই মেয়াদ শেষ করে এখন তৃতীয় মেয়াদে সরকারে আছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে দুই মেয়াদে দেওয়া হয় নতুন করে আরও ২৮২টি অস্ত্রের লাইসেন্স। আর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেওয়া হয় ১৬টি অস্ত্রের লাইসেন্স।
মহাজোট সরকার আমলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী নূর হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা ছাড়াও আওয়ামী লীগ–সমর্থক তিন কাউন্সিলর অস্ত্রের লাইসেন্স পান, যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্বৃত্তপনার অভিযোগ আছে।
এই সময়ে সাত খুনের ঘটনায় বহুল আলোচিত নূর হোসেন ও তাঁর আট সহযোগী ১১টি অস্ত্রের লাইসেন্স পান। অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে সাতটি শর্টগান, দুটি পিস্তল, একটি রাইফেল ও একটি রিভলবার। নূর হোসেনের নিজের ছিল একটি রাইফেল ও একটি পিস্তলের লাইসেন্স। তখন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ছিলেন মনোজ কান্তি বড়াল, এখন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা তো দুর্বৃত্ত হয়েছে পরে। যখন লাইসেন্স পায় তখন তারা দুর্বৃত্ত ছিল না।’ তিনি দাবি করেন, কেউ যদি অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে এবং পুলিশ রিপোর্ট যদি ইতিবাচক হয়। তাহলে যাচাই–বাছাই করে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলে লাইসেন্স দেওয়া হয়। এখানে জেলা প্রশাসকের কিছু করণীয় নেই।
তবে মনোজ কান্তি বড়ালের এই বক্তব্য সঠিক নয়। নূর হোসেন যখন অস্ত্রের লাইসেন্স পান তখন তিনি খুনসহ ২২ মামলার আসামি। নূর হোসেন ও তাঁর বাহিনী এসব অস্ত্র ব্যবহার করে সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন। এমনকি রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অস্ত্র নিয়ে অংশ নিতেন। ২০১৪ সালে সাত খুনের ঘটনার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে এসব অস্ত্র জব্দ ও লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের চার–পাঁচ বছর আগে থেকেই আমরা এই নূর হোসেনের খুনখারাবি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সম্পর্কে বলে আসছিলাম। প্রশাসন কিন্তু এসবে কান দেয়নি। নীতিমালা সঠিকভাবে মানা হলে তো নূর হোসেনের মতো চিহ্নিত সন্ত্রাসী এত লাইসেন্স পেত না। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের আগে-পরে সংঘটিত অনেক হত্যার ঘটনা এড়ানো যেত।’
যেভাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী বন্দুক, শর্টগান ও পয়েন্ট টু টু বোর রাইফেলের লাইসেন্স দেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসক। পিস্তল ও রিভলবারের লাইসেন্সের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের সুপারিশের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। তবে জেলা প্রশাসনের সুপারিশই আসল। তার আগে আবেদনকারীর ব্যাপারে পুলিশের প্রতিবেদন বা ছাড়পত্র নেওয়া হয়।
এ নিয়ে কথা হয় নারায়ণগঞ্জের সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক (বর্তমানে যুগ্ম সচিব) রাব্বী মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার সময় খুব কমসংখ্যক অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কোনো তদবির ছিল না। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ আমার। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রচলিত আইনের আলোকে লাইসেন্স দিয়েছি।’
উদ্বেগ
নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এমনিতেই অপরাধ জগতের লোকজনের হাতে হাতে অবৈধ অস্ত্র। বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তা দেখা যায়। এখন যদিও অবৈধ অস্ত্রবাজেরা বৈধভাবে অস্ত্র রাখার লাইসেন্স পান, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা থাকে না। এ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখানে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের অনেক নজির আছে। আশা করব, অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার আগে সরকার বিচার–বিবেচনা করবে। দুর্বৃত্তদের হাতে যেন অস্ত্রের লাইসেন্স না যায়, সেটা নিশ্চিত করবে।
এ বিষয়ে কথা হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশে কার কাছে কী ধরনের অস্ত্র আছে, সেসব তথ্য অনলাইনে আনা হবে। যেহেতু সরকারই অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছে, সেহেতু বলা যাবে না যে যাচাই–বাছাই করে দেয়নি। তারপরও অনলাইনে সব তথ্য এলে আমরা বুঝতে পারব কার কাছে অস্ত্রগুলো রয়েছে।’