জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ৬৮ মামলার বিচার ঝুলে আছে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

১৪ বছর আগে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে পুলিশের তল্লাশিচৌকির সামনে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গিদের হামলায় এক পুলিশ সদস্যসহ দুজন নিহত হন। আহত হন ১৫ পুলিশ সদস্য। এ ঘটনায় করা মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। 

কেবল এ মামলাটি নয়; জঙ্গিদের বিরুদ্ধে থাকা ৬৮টি মামলা চট্টগ্রামের আদালতে ঝুলে আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সাক্ষী হাজির না হওয়া, বিচারকের পদ শূন্য থাকা, পলাতক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন না আসাসহ নানা কারণে বিচারকাজ এগোচ্ছে না। 

আদালত সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর আদালত ভবনের পুলিশের তল্লাশিচৌকির সামনে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলে মারা যান পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া ও ফুটবলার শাহাবুদ্দীন। এ মামলার ৭৭ জন সাক্ষী। এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৯ জন। সাক্ষীদের একজন মো. মঈন উদ্দিন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সাক্ষ্য দিতে আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কখনো বিচারক না থাকায়, কখনো আসামিদের হাজির না করায় তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। তবে যখনই ডাকা হবে তিনি যাবেন।

এ মামলাটি গত বছরের আগস্টে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে বদলি হয়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মো. আইয়ুব খান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কোনো মামলায় পুলিশ সাক্ষীও সাক্ষ্য দিতে আসেননি। এ ছাড়া দুই বছর ধরে ট্রাইব্যুনাল বিচারকশূন্য রয়েছেন, যার কারণে বিচারকাজ শেষ করা যায়নি।

২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নগরের টেরিবাজার এলাকার ভাড়া বাসা থেকে শতাধিক হাতবোমাসহ জেএমবির দুই সদস্য মাছুম বিন হাই ও মোহাম্মদ আলমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এই মামলায় ২৮ সাক্ষীর মধে৵ এ পর্যন্ত ১৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। 

চার বছর আগে ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নগরীর আকবর টিলা এলাকায় ল্যাংটা ফকিরের মাজারে দুজনকে জবাই করে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এর ১৯ দিনের মাথায় ২৩ সেপ্টেম্বর মাঝিরঘাট এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন। এরপর ৫ অক্টোবর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগরের একটি বাসা থেকে বোমা, অস্ত্র-গুলিসহ পাঁচ জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলি​শ। গ্রেপ্তার এসব জঙ্গি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ল্যাংটা ফকির ও তাঁর খাদেমকে জবাই এবং মাঝিরঘাটে ছিনতাই ও হত্যার ঘটনায় তারা জড়িত ছিল। এরপর ২৭ ডিসেম্বর হাটহাজারীর আমানবাজারে জেএমবি নেতা ফারদিনের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে বোমা তৈরির নানা উপকরণ উদ্ধার করে পুলিশ। এসব ঘটনায় মোট ৯টি মামলা হয়। একটিরও বিচার শেষ হয়নি। কোনোটিতে দুজন আবার কোনোটিতে চারজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। 

>সাক্ষী হাজির না হওয়া, বিচারকশূন্যতাসহ নানা কারণে বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
গত দুই বছরে একটি মামলারও রায় হয়নি।


২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির ভেতরে দুটি মসজিদে বোমা হামলায় নৌবাহিনীর কর্মকর্তাসহ ২৪ জন মুসল্লি আহত হন। ৯ মাস পর ইপিজেড থানায় মামলা হয়। সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে করা দুই মামলার কোনোটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়নি। একই অবস্থা ২০১৭ সালে সীতাকুণ্ডে ও মিরসরাইতে তিন জঙ্গি আস্তানা থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় করা চার মামলার।

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধে৵ ৪২টি চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মনোরঞ্জন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধার্য তারিখে সাক্ষীরা না আসায় মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের আদালতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনো মামলার সর্বশেষ রায় হয় ২০১৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। ২০০৫ সালে দুই বিচারকের এজলাসে বোমা ছুড়ে মারার ঘটনায় করা দুটি মামলায় ওই রায় দেন আদালত। তাতে তিন জঙ্গির ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর গত দুই বছরে চট্টগ্রাম
আদালতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চলমান কোনো মামলার রায় হয়নি।