মেলান্দহে শতাধিক বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রের পেটে
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ ইউনিয়নের বীরহাতিজা গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের শিকার হয়ে শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। পরিবারগুলো সবকিছু হারিয়ে এখন রাস্তায় বা অন্যের বাড়ির উঠানে আশ্রয় নিয়েছে। তীব্র ভাঙন অব্যাহত আছে। কিন্তু ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত বুধবার দুপুরে ভাঙনের চিত্র দেখা গেছে।
ছবুরা বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘বীরহাতিজা গ্রামের মানুষগো গ্রাম ছাড়া করতেই এই খেলা চলছে। কবে থেকে নদ ভাঙছে তো ভাঙছেই। কারও মাথাব্যথা নেই। শহর থেকে নেতারা এবং কত্ত অফিসার আইল আর গেল। সবাই দেখেই চলে যায়। এদিকে আমগরে সর্বনাশ হচ্ছে। কই এখন ভাঙন ঠেকাতে একটি বস্তাও ফেলা হলো না।’ এসব বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ছবুরা বেগম বীরহাতিজা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর ছোট্ট একটি সংসার ছিল। তিন ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে সুখেই সংসার চলছিল। স্বামী কৃষিকাজ করেন। আর তিনি সংসারের কাজ করার পাশাপাশি গরু-ছাগল পালন করেন। চারটি টিনশেড ঘর ছিল। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে তাঁর পুরো বাড়িটি নদের গর্ভে চলে গেছে। তিনি শুধু কিছু জিনিসপত্র ও গবাদিপশু রক্ষা করতে পেরেছেন। এখন ওই গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ির উঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু নিজের ভিটামাটির মায়া এখনো ছাড়তে পারেনি। তাই নদের তীরে এসে বসেন। তাঁর বাড়ি যেখানে ছিল, সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।
বুধবার দেখা গেছে, মেলান্দহ-ইসলামপুর সীমানার শেষ মাথায় বীরহাতিজা গ্রাম। এই গ্রামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। জামালপুর-ইসলামপুর সড়কের ৭০০ থেকে ৯০০ মিটার দূরেই ভাঙন অব্যাহত আছে। বড় বড় ঢেউয়ে আছড়ে পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের মাটি ভেঙে ভেঙে পড়ছে নদের পানিতে। পশ্চিম পাশ থেকে পূর্ব দিকে তাকালেই ভাঙনের চিত্র লক্ষ করা যায়। অনেকের বসতভিটার খুব কাছে চলে এসেছে নদ। অনেকে টিনের চাল খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ি আসবাব সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ আবার তাঁদের বসতভিটার গাছ কেটে নিচ্ছেন।
গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, কয়েক সপ্তাহে এই গ্রামের ফজর আলীর দুটি, অহিজামালের দুটি, সোনা মিয়ার একটি, হবিবুর রহমানের দুটি, আজম আলীর একটি, আজিম উদ্দিনের দুটি, মিনহাজ মিয়ার একটি, আমির মিয়ার একটি, আজিজলের একটি, সিরাজ আলীর একটি, আশরাফ আলীর একটি, হামিদ আলীর একটি, লোকমান হোসেনের একটি, উমর আলীর একটি, সোনাওল্লাহর দুটি, ইব্রাহিম আলীর একটিসহ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক কৃষিজমিও ভেঙে পড়ছে।
রেহেনা বেগম নামের আরেকজন গৃহবধূ বলেন, ‘চার বছর ধরে ভাঙন চলছে ব্রহ্মপুত্রের। সেই সময় থেকে গ্রামবাসী ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে আসছেন। কিন্তু কেউ আমাদের কথা কানে তোলেননি। আগে আস্তে আস্তে ভাঙছিল। কিন্তু তিন থেকে চার সপ্তাহ ধরে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ শুরু করে। চোখের সামনে আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ছে। আমরা তা সহ্য করতে পারছি না। কিন্তু করারও কিছু নেই।’
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে পাউবো জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে ব্যাপক ভাঙন চলছে। পানির গভীরতাও অনেক বেশি। ওই গ্রামের ভাঙনরোধে একটি প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে। শুকনো মৌসুমে ওই এলাকায় ভাঙনরোধে কাজ করা হবে।