খেলার মাঠে পশুর হাট
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ধূপখোলায় অবৈধভাবে কোরবানির পশুর হাট বসানো হয়েছে। সেখানে মাঠ খুঁড়ে, বাঁশ পুঁতে এবং ত্রিপল টানিয়ে গরু রাখা হচ্ছে। পশুর বর্জ্যে এবং খোঁড়াখুঁড়িতে খেলার মাঠের দফারফা হয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের না জানিয়ে খেলার মাঠে হাট বসিয়েছেন ইজারাদারেরা। আর শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলায় প্রতিবছরই অবৈধভাবে খেলার মাঠে হাট বসানো হয়। এতে মাঠটি খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
এবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ১২টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা দিয়েছে। ধূপখোলা মাঠসংলগ্ন খালি জায়গায় হাট বসানোর ইজারা পেয়েছে ইস্ট এন্ড ক্লাব। কিন্তু হাট কর্তৃপক্ষ অনুমতির তোয়াক্কা না করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ পর্যন্ত হাট সম্প্রসারিত করেছে।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ধূপখোলা মাঠ তিন অংশে বিভক্ত। উত্তর-পশ্চিমাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ডিএসসিসির অধীনে। আর পূর্বাংশ ইস্ট এন্ড ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ইস্ট এন্ড ক্লাব কর্তৃপক্ষ ধূপখোলা মাঠের নিজেদের অংশে কোরবানির কিছু পশু রেখেছে। তবে সবচেয়ে বেশি গরু রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ অংশে। খেলার মাঠের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে গরু রাখার ব্যবস্থা করেছে হাট কর্তৃপক্ষ। মাঠের পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর অংশে চলছে নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি। সেখানে আরও গরু রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
খেলার মাঠে গরু নিয়ে বসা ব্যাপারী মহসিন আলী বলেন, ইজারাদারের লোকজন তাঁদের এখানে পশু নিয়ে বসতে জায়গা করে দিয়েছেন। এটি খেলার মাঠ কি না? বৈধ না অবৈধ হাট? এসবের কিছুই তিনি জানেন না।
২০১৭ সালে খেলার মাঠ, পার্ক, রাস্তার ওপর পশুর হাট না বসাতে নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তা মানছেন ইজারাদারেরা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ পশুর হাটও ছড়িয়ে পড়েছে খেলার মাঠে, প্রধান সড়কে এবং অলিগলিতে।
>জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের না জানিয়ে খেলার মাঠে হাট বসিয়েছেন ইজারাদারেরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে হাট বসানোর পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবং মাঠের পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় মাঠে নেমে একাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আসছে জানুয়ারিতে এই মাঠেই অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন। এমন অবস্থায় গর্ত করে বাঁশ পুঁতে রাখায় মাঠের অবস্থা আরও বাজে হচ্ছে। এই বর্ষা মৌসুমে কাদা-গোবরে মাঠ খেলাধুলার একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
গত বছর এই মাঠে খেলতে গিয়ে গুরুতর আহত হন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদুর রহমান হন। তাঁর চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় বহন করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে হাট বসানোয় ক্ষোভ প্রকাশ তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই এখানে গরুর হাট বসানো হয়। এর ফলে মাঠ আর খেলার উপযোগী থাকে না। গর্তে ভরে যায়। যারা হাট বসায়, তারা ঈদের পর মাঠের কোনো সংস্কারও করে না। আমরা খেলাধুলা করতে নেমে দুর্ঘটনায় পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
ইস্ট এন্ড ক্লাবের পক্ষ থেকে শামসুজ্জোহা হাটের দরপত্রে অংশ নেন। খেলার মাঠে হাট বসানোর কারণ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ক্লাবের সহসভাপতি ও স্থানীয় ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহীদুল্লাহ বলেন, ‘ক্লাবের উন্নয়নের জন্য সিটি করপোরেশন হাট ইজারা দিয়ে থাকে। বাইরে হাট বসালে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সিটি করপোরেশনের মৌখিক অনুমতি নিয়েই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। হাট শেষে সিটি করপোরেশন মাঠ পরিষ্কার করে দেবে। যদি আরও সংস্কার এর প্রয়োজন হয়, ক্লাবের পক্ষ থেকে করে দেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান জানান, কাউকে খেলার মাঠে হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘হাট বসানোর জন্য আমাদের কাছে কেউ অনুমতি নিতে আসেনি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কখনো এ ধরনের অনুমতি দেওয়া হয় না। তারা প্রতিবছর এ রকম করে আসছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছি, তারাও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরফান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলার মাঠে হাট বসানোর বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আজ (শুক্রবার) হাট পরিদর্শন করতে যাব। যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে হাট বসিয়ে থাকে, তাহলে উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে।’
স্কুলের মাঠে ছাগলের হাট
গতকাল দুপুরে দেখা যায়, ধূপখোলা মাঠসংলগ্ন কোববাদ সরদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ছাগলের হাট বসানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ছাগল এনে স্কুলের মাঠ ভর্তি করে ফেলেছেন। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাইরের মূল সড়কেও ছাগল রাখা আছে। স্কুলমাঠের মধ্যে ছাগল রাখায় মাঠের বাগানের গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাঠের সব ঘাস বালু দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। স্কুল ভবনের বারান্দাসহ অন্যান্য স্থান অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে দুপুরে দেখা যায়, মতিঝিলের মধুমিতা হলের উত্তর পাশের প্রধান সড়ক দখল করে কোরবানির পশু রাখায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন ইজারাদার।
পথচারীরা জানান, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব-সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গায় ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠানই মধুমিতা হলের পাশে হাট বসিয়েছে।