কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির একদিকে উন্নতি ও অন্যদিকে অবনতি ঘটেছে। সদর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় পানি কমেছে। তবে গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রামে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগ বেড়েছে।
গাইবান্ধায় নতুন এলাকা প্লাবিত
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বাঙ্গালী নদীর বাঁধের বিশাল অংশ ভেঙে যাওয়ায় এ উপজেলার পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা গতকাল প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলো হলো গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার অর্ধেক এবং নাকাই, হরিরামপুর, মহিমাগঞ্জ, তালুককানুপুর, দরবস্ত, শালমারা, গুমানিগঞ্জ, ফুলবাড়ী, রাখাল বুরুজ ইউনিয়ন। মহিমাগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ সাবজোন এলাকায়২৫০ একর জমির আখ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। করোতোয়ার পানি বৃদ্ধি ও উজানের ঢলে পলাশবাড়ীর মনোহরপুর ও হরিনাথপুর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে সাঘাটার মুক্তিনগর ইউনিয়নের জাহেদুল ইসলামেরমেয়ে জান্নাতী খাতুন (১০) মারা গেছে।
এদিকে সকালে গাইবান্ধা শহরের পার্ক, পি কে বিশ্বাস, সার্কুলার ও ভি এইড সড়কের পানি সরে গেছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিবি, সান্তারপট্টি ও স্টেশন সড়কের কাচারি বাজার থেকে পুরোনো জেলখানা পর্যন্ত, মুন্সিপাড়া শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়ক, ব্রিজ, কালীবাড়িপাড়া, কুটিপাড়া, পূর্বপাড়া, একোয়াস্টেটপাড়া ও পুলিশ লাইনসংলগ্ন সড়কে হাঁটুপানি ছিল। এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, গতকাল বিকেলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ১২৩ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
কুড়িগ্রামে পানির নিচে চিলমারী
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুণ। গতকাল বিকেলে ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে ৮৩ ও ৪৫ এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তবে পানি কমলেও খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য, জ্বালানি ও শৌচাগারের অভাব তীব্র হচ্ছে। সবজির খেত তলিয়ে যাওয়ায় কারও ঘরে নেই তরকারি। ফলে শুকনো ভাতে লবণ ছিটিয়ে খাওয়া ছাড়া গতি নেই। এ দুর্ভোগ জেলার সাড়ে আট লাখ বানভাসির।
এদিকে চিলমারী উপজেলার ৩০ হাজার ৯৩৯টি পরিবারের মধ্যে৩০ হাজারের বেশি পরিবার পুরোপুরি পানিবন্দী হয়েপড়েছে।রমনা রেলস্টেশনের উত্তরে রেললাইনের নিচ থেকে ১৫০ মিটার এলাকার মাটি পানির তোড়ে সরে যাওয়ায় রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে। এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় ১১০ মেট্রিক টন চাল ও ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
এ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, ‘আমার জানামতে, গত ১০০ বছরে এত পানি চিলমারীর মানুষ দেখে নাই।রেললাইন ও পাকা সড়কে শত শত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।’
দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি
কুড়িগ্রামের গণকমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি নাহিদ হাসান বলেছেন, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার ৯৫ শতাংশ মানুষ এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বানের পানিতে ভাসছেন। তাঁদের বাঁচাতে হলে সরকারকে এখনই এ তিন উপজেলা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হবে। গাইবান্ধাকেও দুর্গত জেলা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহামুদ হাসান।