রাজধানীর হাসপাতালে পাঠাগার
হাসপাতালের অভ্যর্থনাকক্ষে বই রাখার প্রয়োজন কেন হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিন তোহা বললেন, ‘যেসব জায়গায় সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে বসে থাকতে হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি জায়গা হলো হাসপাতাল। এখানে অবসর সময়টুকু নষ্ট না করে মানুষ যাতে বই পড়ে কাজে লাগাতে পারে, সেই চিন্তা থেকেই হাসপাতালের এক কোণে গড়ে তুলেছি পাঠাগার।’
শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘বইবন্ধু’ নামে শিক্ষা প্রকল্পের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন তোহার সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব বিষয় জানা গেল। ‘সোশ্যাল চেইন ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অধীনে বইবন্ধু প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ও একদল তরুণের সহায়তায় এগিয়ে চলছে বইবন্ধুর কার্যক্রম।
২০১৫ সালের নভেম্বরে যাত্রা শুরু করে সোশ্যাল চেইন ফর ডেভেলপমেন্ট। এর আওতায় মানুষকে বই পড়ায় আগ্রহী করে তোলার উদ্দেশ্যে গত বছর থেকে শুরু হয় বইবন্ধু কর্মসূচি। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঢাকায় মোহাম্মদপুরের ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের অভ্যর্থনাকক্ষের এক কোণে করা হয়েছে একটি ছোট পাঠাগার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছায় ও চিকিৎসকদের সংগঠন ‘প্ল্যাটফর্ম’–এর সহযোগিতায় চলছে এই কার্যক্রম।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে কিংবা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা এই পাঠাগার থেকে বই নিয়ে বসে বসে পড়েন। অল্প কিন্তু সৃজনশীল সব বই আছে এখানে। যাযাবরের ‘দৃষ্টিপাত’, রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্চয়িতা’, ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’, জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’, লুৎফর রহমানের ‘উন্নত জীবন’সহ নানা ধরনের বই দেখা গেল এই পাঠাগারে।
এর আগে বইবন্ধু প্রকল্পের অধীনে আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর ২৯টি বাসে বইবন্ধু পাঠাগার স্থাপন করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি সেলুনের একাংশে পাঠাগার স্থাপন করে প্রশংসা কুড়িয়েছে তারা। রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুরে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের জন্য গড়ে তোলা হয় ‘বইবন্ধু আলোর ঘর’। বইয়ে ভর্তি এই আলোর ঘর তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোর জীবনে আলো ছড়ানো শুরু করেছে। থেমে নেই বইবন্ধু। সর্বশেষ সংযোজন হাসপাতালের এই ছোট্ট পাঠাগার।
সরকারি–বেসরকারি অন্যান্য হাসপাতালেও পাঠাগার করতে চায় বইবন্ধু। দু–একটি হাসপাতালের সঙ্গে কথাও চলছে বলে জানালেন মহিউদ্দিন তোহা। বই নিয়ে তাঁদের অনেক পরিকল্পনা আছে। তোহারা চান দেশের প্রতিটি ক্যাফে ও রেস্তোরাঁয় জায়গা করে নিক পাঠাগার। সে অনুযায়ী কাজও হচ্ছে, বইবন্ধুর ‘ক্যাফে পাঠাগার’–এর ভাবনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নরসিংদীর মাধবদীতে খুলেছে একটি রেস্তোরাঁ।
প্রকল্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে ‘বিচ পাঠাগার’। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে তারা গড়ে তুলতে চায় একাধিক ছোট ছোট পাঠাগার। এ জন্য সেখানকার জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়েছে বলেও জানালেন তোহা। এখন শুধু আর্থিক সহযোগিতার অপেক্ষা। তোহা বলেন, ‘মানুষের সমাগম যেসব জায়গায় হয়, যেমন: ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, টিএসসি, সেসব জায়গায় ‘বইবুথ’ করতে চাই। টেলিফোন বুথের মতো হবে বইবুথগুলো। এসব বুথে থাকবে বই।’
বই নিয়ে স্কুল–কলেজভিত্তিক বইবিষয়ক আলোচনারও আয়োজন করতে চান তাঁরা। মহিউদ্দিন তোহা বলেন, তাঁদের একটি বইও কিনতে হয়নি। সাধারণ মানুষই নতুন–পুরোনো বই অনুদান হিসেবে দিয়েছে। তিনি জানালেন, যেকেউ বইবন্ধু প্রকল্পে বই ও অর্থ অনুদান হিসেবে দিতে পারেন। শুধু তা–ই নয়, কেউ চাইলে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেও বইবন্ধুর সঙ্গে কাজ করতে পারেন। বইবন্ধুর ঠিকানা: ১২/২০ শেখেরটেক, শ্যামলী, আদাবর, ঢাকা।