৭১ ভোগ্যপণ্যের ৬৯টিই মানহীন
তেল, দুধ, মসলাসহ আট ধরনের ভোগ্যপণ্যের ৭১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে। পরীক্ষায় ৬৯টি পণ্যই মানোত্তীর্ণ হতে পারেনি। পণ্যগুলোর বেশ কয়েকটিতে অ্যান্টিবায়োটিক ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে; যা দীর্ঘ মেয়াদে নানা ধরনের জটিল রোগের কারণ হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি লেকচার থিয়েটারে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খাদ্যের গুণগত মান নিয়ে সরকার ও সাধারণ মানুষের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মাসি অনুষদের বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পণ্যগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এবং বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক আ ব ম ফারুক।
লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় এমন ঘির ৮টি, ফ্রুট ড্রিংকসের ১১টি, শুকনা মরিচের গুঁড়ার ৮টি, হলুদের গুঁড়ার ৮টি, পাম তেলের ১০টি, সরিষার তেলের ৮টি, সয়াবিন তেলের ৮টি, পাস্তুরিত তরল দুধের ৭টি এবং অপাস্তুরিত তরল দুধের ৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নির্ধারিত বিভিন্ন মানদণ্ড অনুযায়ী পণ্যগুলো পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় হলুদের দুটি নমুনা ছাড়া বাকি সব পণ্যেই ভেজাল অথবা ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পাস্তুরিত তরল দুধের ৭টি নমুনাতেই মানবদেহে ব্যবহার করা হয় এমন অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায়। অপাস্তুরিত তরল দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়নি।
>পরীক্ষায় পাস্তুরিত তরল দুধের ৭টি নমুনাতেই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে
অপাস্তুরিত তরল দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়নি
হলুদের দুটি নমুনা ছাড়া বাকি সব পণ্যেই ভেজাল বা ক্ষতিকর রাসায়নিক মিলেছে
আ ব ম ফারুক বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের একটি নিয়ম আছে। মানবদেহে ব্যবহার করা হয় এমন অ্যান্টিবায়োটিক পশুর শরীরে ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু খামারগুলোতে সেটি করা হচ্ছে। এ ছাড়া গরুর খাবারেও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। এতে দুধ ও মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই অ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত দুধ ও মাংস খেলে মানুষের শরীরে আর প্রয়োজনের সময় অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না।
পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ বলেন, হলুদের গুঁড়ায় কাপড়ের রং পাওয়া গেছে। কিন্তু রং কী পরিমাণে আছে, তা নিশ্চিত হতে আরও পর্যালোচনা করা হবে। এই রং লিভার, কিডনিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসার হতে পারে। এমন রংযুক্ত হলুদ খেলে শিশুদের হাঁপানি হয়।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি অনুষদের ডিন এস এম আবদুর রহমানও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, খাবার মানহীন হলে পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিকও পাওয়া যাচ্ছে। নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলোর বক্তব্য না পাওয়ায় এসব পণ্যের নাম প্রকাশ করা হলো না।