আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
জন্মের পর থেকে বেশির ভাগ সময়ই গেছে লড়াই-সংগ্রামে। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র—সবই দেখেছে দলটি। এরই মধ্যে ৭০ বছর পূর্ণ করল আওয়ামী লীগ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম নেওয়া দলটির ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে তা শুধু আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে। প্রতিষ্ঠার শুরুতে দলটির নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হক।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। ১৯৫২–এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯–এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ—সব অর্জনই হয়েছে এই দলের নেতৃত্বে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে চলছিল, ঠিক তখনই আঘাত হানে ঘাতকেরা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
১৯৮১ সালে বিদেশে অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন নেতা–কর্মীরা। এরপর ওই বছর ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। এরপর থেকে তিনি শক্ত হাতে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। মাঝখানে এক মেয়াদ ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও দলের অনেক নেতা নিহত ও আহত হন। এরপর ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের টানা ১১ বছরের শাসনামলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন দেশ-বিদেশে আলোচিত হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট প্রেরণ করা হয়েছে। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে সাফল্য এসেছে। জঙ্গি দমনে সাফল্য সারা বিশ্বে আলোচিত। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিসহ বড় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বর্জন এবং অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি সমালোচিত হয়েছে। গত ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত ছিল না, এমন সমালোচনাও আছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির প্রতিটি মহৎ, শুভ ও কল্যাণকর অর্জনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে। জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি।
কর্মসূচি
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার সূর্যোদয়ের ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানীর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। আগামীকাল সোমবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সব কর্মসূচি যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন।