এক পদের জন্য ১৫ হাজার আবেদন
বরিশালের ১০ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের ২০০ শূন্য পদের বিপরীতে ৬২ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছেন। এর মধ্যে বরিশাল সদর উপজেলায় একটি পদের অনুকূলে আবেদন জমা পড়েছে ১৫ হাজার। এ অবস্থায় অনেক আবেদনকারীই হতাশা প্রকাশ করেছেন। ২১ ও ২৮ জুন এই নিয়োগ পরীক্ষা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সূত্র জানায়, বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায় ১ হাজার ৫৮১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ২০০ সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। এসব শূন্য পদের অনুকূলে এবার ৬২ হাজার প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন করেছেন। এই ২০০ পদের মধ্য বরিশাল সদর উপজেলায় রয়েছে মাত্র একটি শূন্য পদ। আর এই পদে আবেদনকারীর সংখ্যা ১৫ হাজার।
বরিশাল সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, সদর উপজেলায় মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২০৩টি। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকের পদ ১ হাজার ১৯৩টি। এই উপজেলায় শুধু বরিশাল নগরের মাতৃমন্দির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি পদ শূন্য রয়েছে। ওই পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ও বরিশাল সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি আবু জাফর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বরিশাল সদরে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ধোঁকাবাজি হচ্ছে। কেননা নগরসহ সদরের কোনো বিদ্যালয়েই শিক্ষকের পদ শূন্য নেই। বাইরের জেলা থেকে শিক্ষক এনে এখানে শূন্য কোটা পূরণ করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতে শিক্ষকদের যোগদান বা বদলি না করা হয়, সে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ আন্দোলন করলেও সেই দাবি মানা হয়নি। বরং নিয়ম অনুযায়ী ১০ ভাগের জায়গায় ২০ ভাগ শিক্ষক বাইরের জেলা থেকে এনে বরিশালে শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে। ফলে নিজ নিজ জেলার নাগরিকেরা নিয়োগবঞ্চিত হচ্ছেন।
ইব্রাহিম ইসলাম নামের এক আবেদনকারী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। তাতে খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর টেলিটক মোবাইল সিমের মাধ্যমে ১৭৫ টাকা দিতে হয়েছে। আবার প্রবেশপত্র তুলতে গেলেও যাচ্ছে ২০ টাকা। তারপর আবার পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াতের খরচ—সব মিলিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হচ্ছে একেকজন চাকরিপ্রার্থীর।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু বরিশাল সদরে পদ খালি না থাকার বিষয়টি প্রথমে জানানো হয়নি। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি বরিশাল সদরে একটিমাত্র শূন্য পদ রয়েছে।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটিমাত্র পদের জন্য ১৫ হাজার পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণ মানে অন্তত ১৪ হাজার প্রার্থীর টাকা অপচয়। পদের সংখ্যা না বাড়িয়ে এভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করাটা ঠিক হয়নি। এটা প্রতারণা ছাড়া কিছুই না।
তবে জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ আর মিজানুর রহমান গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, সদরে এখন পর্যন্ত একটি পদ শূন্য আছে। তবে নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আরও অন্তত এক বছর লেগে যাবে। এই এক বছরে আরও কিছু পদ শূন্য হতে পারে। তখন এসব শূন্য পদ এই পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই পূরণ করা হবে। আর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শূন্য পদ উল্লেখ করার নিয়ম নেই। তাই করা হয়নি।