'সিন্ডিকেট' করে ধান বিক্রি, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় চলতি বছর বোরো মৌসুমে কৃষকদের পরিবর্তে একটি চক্র সরকারি গুদামের ধান বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।

কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী ও সরকারি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন মিলে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তাঁরা কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড জোগাড় করেছেন এবং কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি মণ ধান ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে কিনে সরকারি খাদ্যগুদামে ১ হাজার ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৩ মে উপজেলার শ্রীরামকাঠি খাদ্যগুদাম প্রাঙ্গণে জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন চলতি বছরের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ বছর নাজিরপুরে ২৬ টাকা কেজি দরে ৪১১ মেট্রিক টন ধান এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ৮৬৬ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে।

স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। সরকারিভাবে প্রতি মণ ধান কেনা হচ্ছে ১ হাজার ৪০ টাকায়। কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, বাজারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা পাওয়ায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে নিচ্ছেন। তাঁরা কিছু কৃষককে ‘ম্যানেজ’ করে তাঁদের কৃষি কার্ড ব্যবহার করে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করছেন। কৃষকেরা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে ধান কেনা শেষ বলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলার সেখমাটিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক রুহুল খান বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে যাওয়ার পর বলা হলো ধান কেনা শেষ। পরে জানতে পারলাম, একটি প্রভাবশালী মহলের কাছ থেকে গুদামের কর্মকর্তারা ধান কিনছেন।’

>

নাজিরপুরে বোরো ক্রয়
কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি মণ ধান ৫০০–৫৫০ টাকা দরে কিনে গুদামে ১ হাজার ৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে

নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অমূল্য রঞ্জন হালদার বলেন, ‘প্রকৃত কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। উপজেলার সদর, শ্রীরামকাঠি ও সেখমাটিয়া ইউনিয়নের অনেক কৃষক আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা খাদ্যগুদামে গিয়েও ধান বিক্রি করতে পারেননি। গুদাম থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে ধান সংগ্রহ শেষ। আমি খোঁজ নিয়ে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছি। এগুলো উপজেলা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আল আমীন শেখ, ধান ব্যবসায়ী মোস্তফা চৌকিদারসহ অন্তত সাতজন ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা কৃষকদের কাছ থেকে কম মূল্যে ধান কিনে দ্বিগুণ মুনাফায় সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করছেন।

এ সম্পর্কে উপজেলার কলারদোয়ানিয়া গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোস্তফা চৌকিদার বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন থেকে ২৫ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্যগুদাম। আমি একজন কৃষক হিসেবে ওই ধান সরবরাহ করছি।’ আর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আল আমীন শেখ বলেন, ‘আমি ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নই। অনেক কৃষক এখানে ধান বিক্রি করতে আসার পর তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি তাঁদের গুদামে ধান বিক্রিতে সহায়তা করছি।’

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহের বিষয়টি অস্বীকার করে শ্রীরামকাঠি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বর্ণা রানী মৃধা বলেন, ‘কৃষকের কৃষি কার্ড, পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অন্য কেউ যদি ধান বিক্রি করেন, তা বুঝব কীভাবে। হয়তো তাঁরা কৃষকদের “ম্যানেজ” করে এটা করছেন। ইতিমধ্যে ১০০ মেট্রিক টন ধান কিনেছি। গুদামে কয়েক শ মেট্রিক টন ধান রাখা আছে। ওই ধান মাপজোখ করে কেনার প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে উপজেলার শ্রীরামকাঠি, নাজিরপুর সদর ও সেখমাটিয়া ইউনিয়নের নির্ধারিত ধান ক্রয় শেষ হয়েছে। ধান সংগ্রহে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজী আকতার বলেন, সরকারি ধান ক্রয়ে কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেউ অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।