'পীরের' ডেরায় কলেজছাত্রীর মৃত্যু
ময়মনসিংহের নান্দাইলে মো. লিয়াকত আলী খান নামের কথিত এক পীরের দরবারে চিকিৎসা নিতে এসে তানিয়া আক্তার (১৮) নামের এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু ঘটেছে। গত শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
দরবারের লোকজনের দাবি, হৃদ্রোগের সমস্যায় ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুটি নিয়তির বিধান ধরে নিয়ে পরিবারের লোকজনও লাশ বাড়িতে নিয়ে দাফন করেছেন।
তানিয়া পাশের গৌরীপুর উপজেলার অচিন্তপুর ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামের মো. বাচ্চু মিয়ার মেয়ে। তিনি গৌরীপুর সরকারি মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষে পড়তেন।
কথিত পীরের ডেরাটি উপজেলার মুশুলি ইউনিয়নের তারঘাট বাজারের পাশে অবস্থিত। ওই ডেরায় চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের লাঠিপেটা ও পীরের ফুঁ দেওয়া পানি পান করিয়ে চিকিৎসা করা হয়। পীরের নানা কিংবদন্তির কথা প্রচার করে ডেরায় রোগী আনার জন্য বিভিন্ন এলাকায় লোক নিয়োজিত রয়েছে। প্রতি শুক্রবার পীরের ডেরায় দরবার বসানো হয়। প্রকাশ্যে এ ধরনের কার্যক্রম চললেও প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
শুক্রবার ডেরায় চিকিৎসা নিতে আসেন তানিয়া। পীরের ফুঁ দেওয়া পানি নিয়মিত পান করার পরও তার জীবন বাঁচেনি। খবর পেয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে পীরের ডেরায় গিয়ে ছাত্রীর স্বজনদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা জানান, ছাত্রীর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর উটকো ঝামেলা এড়াতে লাশ গোসল করিয়ে তড়িঘড়ি জানাজা পড়িয়ে লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
মুঠোফোনে তানিয়ার চাচা মো. মহসিন আলী বলেন, তানিয়া হৃদ্রোগে ভুগছিলেন। তাঁকে নিয়মিত চিকিৎসক দেখানো হচ্ছিল। এরই মধ্যে তাঁরা প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পারেন নান্দাইলের লিয়াকত পীরের কথা। পীর সম্পর্কে নানা কথাবার্তা শোনার পর পরিবারের লোকজন তানিয়াকে নিয়ে প্রতি শুক্রবার পীরের দরবারে যেতেন।
মেয়েটির স্বজনদের একটি সূত্র জানায়, পীরের নির্দেশে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের নির্দেশনা বাদ দিয়ে তানিয়াকে পীরের পানিপড়া ও দরবারে হাজির হয়ে লাঠির টোকা গ্রহণের মতো অভিনব চিকিৎসা নিতে হতো। কিন্তু এ ধরনের চিকিৎসায় তানিয়ার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। শুক্রবার সকালে পীরের ডেরার ভেতরে যাওয়ার পর তানিয়ার অবস্থার অবনতি ঘটে। দুপুরের দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে দরবার শরিফে গিয়ে কথিত পীর লিয়াকত আলী খানকে পাওয়া যায়নি। পীরের লোকজন জানান, হুজুর (পীর) দরবার শেষ করে কিশোরগঞ্জের বাসায় চলে গেছেন। ঘটনার বিষয়ে দরবারের প্রধান হুজুর গোলাম মো. মাহবুবুল আলম বলেন, হৃদ্রোগের সমস্যার কারণে তানিয়ার মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এনামুল কবীর বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ ধরনের চিকিৎসার কোনো ভিত্তি নেই। এটি প্রতারণার শামিল।