আম পাকা, আঁটি কাঁচা!
আম পেকে টকটকে রং। যেকোনো ক্রেতা এই আম দেখলেই কিনতে আগ্রহী হবেন। দুই সপ্তাহ ধরে দেদার বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। তবে রঙিন এই আম কাটার পর ভেতরের দৃশ্য থমকে যাওয়ার মতো অবস্থা। বেশ কিছু আম কেটে দেখা গেল, ভেতরের আঁটি এখনো কাঁচা। আবার কিছু কিছু আমের ভেতরে পচন ধরেছে।
গতকাল শুক্রবার মিরপুর দিয়াবাড়ি আমের আড়তে অভিযান চালিয়ে এসব আম জব্দ করেছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে থাকা কর্মকর্তাদের ধারণা, কার্বাইড দিয়ে অপরিপক্ব আম পাকানো হয়েছে। ফলে আমগুলো বাইরে রঙিন দেখালেও ভেতরের আঁটি কাঁচাই রয়ে গেছে।
সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত মিরপুর দিয়াবাড়ি ফলের আড়তে অভিযান চালায় র্যাব–৪ ও স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী হাকিম নিজাম উদ্দিন আহমেদ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের জন্য অপরিপক্ব ল্যাংড়া আম নির্ধারিত সময়ের আগেই পেড়ে রাসায়নিকে পাকিয়ে বাজারজাত করছেন। রাসায়নিকে পাকানো এই আম মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
র্যাবের নির্বাহী হাকিম জানান, গতকালের অভিযানে ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে দুই হাজার কেজি ল্যাংড়াসহ অপরিপক্ব আম জব্দ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ করে মোট ছয় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সকালে দিয়াবাড়ি আড়তে র্যাবের উপস্থিতি দেখেই নড়েচড়ে বসেন বিক্রেতারা। প্রথমে একটি আড়ত থেকে আম বের করে তা কেটে ভেতরের আঁটি কাঁচা দেখেই নির্বাহী হাকিমের সন্দেহ হয়। পরে আরও কয়েকটি আড়তে অভিযান চালিয়ে পচা আমও খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর এসব অপরিপক্ব আম জব্দ করেন তিনি। পরে সেগুলো ধ্বংস করা হয়।
বিক্রেতারা কয়েকজন অবশ্য অপরিপক্ব আমে রাসায়নিক প্রয়োগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। হুমায়ূন কবির নামের এক বিক্রেতা বলছেন, রোজা শুরু হওয়ার কারণে আমের কাটতি ভালো। তাই সাতক্ষীরা থেকে এসব আম এনেছেন তিনি। তবে ভবিষ্যতে আমে রাসায়নিক না দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।
নির্বাহী হাকিম সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, গুটি আম গাছ থেকে পাড়ার সিদ্ধান্ত ছিল ১৫ মে থেকে। সে হিসাবে গুটি আম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু ল্যাংড়া আমের প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ৬ জুন পর্যন্ত। আর মিষ্টি আম আম্রপালি ও ফজলি পাড়া শুরু হবে ১৬ জুন থেকে।
অথচ নির্ধারিত সময়ের আগেই এসব কাঁচা আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে পাকানো হয়েছে। ফলে অনেক আম বাইরে থেকে ভালো দেখা গেলেও কাটার পর দেখা যায় ভেতরে আঁটি কাঁচা বা পচা। এটা ভোক্তা অধিকারের লঙ্ঘন। একে তো ভোক্তাকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, পাশাপাশি সঠিক পুষ্টিগুণও মিলছে না ক্রয়কৃত আমে। তাই ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ছয় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
৫ প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা
এদিকে পচা–বাসি ইফতারি বিক্রি এবং নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রির অপরাধে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল দুপুরে মিরপুর ৬ কাঁচাবাজার এবং মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা অফিসের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, সিটি করপোরেশন রমজান উপলক্ষে দেশি গরুর মাংসের দাম ৫২৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত দামের চেয়ে ২৫-৫০ টাকা বেশি দামে মাংস বিক্রি করছে। এসব অভিযোগে মিরপুর ৬ কাঁচাবাজারে সাইফুলের মাংসের দোকানকে ১০ হাজার টাকা, রাজীবের মাংসের দোকানকে ১০ হাজার টাকা, নূর হোসেনের মাংসের দোকানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ছাড়া মিরপুর ১ এলাকায় পচা–বাসি বাসি ইফতারি বিক্রির উদ্দেশ্যে সংরক্ষণের অপরাধে মায়ের দোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টকে ১০ হাজার টাকা ও পূর্ণিমা রেস্তোরাঁকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।