রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গতকাল শুক্রবার বিকেলের প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টিতে প্যারিস রোডের বেশ কয়েকটি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ঝড়বৃষ্টিতে একটি গগন শিরীষ গাছ উপড়ে পড়ায় উপাচার্যের ভবনের সীমানা প্রাচীরের কিছু অংশ ভেঙে যায়। কয়েক জায়গায় বিদ্যুৎ সঞ্চালনার তার ছিঁড়ে যাওয়ায় পুরো ক্যাম্পাসে রাতে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে।
শুক্রবার বিকেলে চারটার দিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। রাজশাহী শহরের কিছু স্থানে শিলাবৃষ্টিরও খবর পাওয়া যায়। প্রায় আধঘণ্টা ধরে ঝড়বৃষ্টি চলতে থাকে। এতে প্যারিস রোডের বেশ কয়েকটি গাছের ডালপালা ভেঙে যায়, একটি গাছ শেকড়সহ উপড়ে পড়ে।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ক্যাম্পাসে দেখা যায়, ঝড়বৃষ্টিতে মূলত ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডটিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরো প্যারিস রোডে অন্তত ১০টি গগন শিরীষ গাছের অধিকাংশ ডালপালা ভেঙে যায়। এই রাস্তাটির পাশেই উপাচার্য ভবন। উপাচার্য ভবনের প্রাচীর সংলগ্ন একটি গাছ শেকড়সহ উপড়ে সীমানা প্রাচীরের মধ্যে পড়ে যায়। পাশের আরও একটি গাছের প্রায় অর্ধেক ভেঙে পড়ে। এতে উপাচার্য ভবনের প্রায় ২০ ফুটের মতো সীমানা প্রাচীর ভেঙে যায়।
উপাচার্য ভবনে প্রবেশদ্বারের পাশে প্রহরীদের থাকার জন্য একটি ছোট একতলা পাকা ঘর আছে। প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির সময় ঘরটির ওপর গগন শিরীষ গাছের বড় একটি ডাল ভেঙে পড়ে। ওই সময়ে প্রবেশদ্বারে প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন মো. ইসলাম আলী ও মো. সাবদুল আলী। ঝড়বৃষ্টির সময়ে তারা সেই ঘরটিতেই ছিলেন। প্রথম আলোকে তারা বলেন, ‘ঝড়ের মধ্যে একসময় হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। আমরা খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। তবে গাছের ডালটি আকারে বড় হলেও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’
প্যারিস রোডের বিভিন্ন অংশে আরও সাত-আটটি গাছের ডালপালা ভেঙে যায়। এতে সন্ধ্যার দিকে চার-পাঁচ জায়গায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের কর্মীরা গাছের ছোটখাটো ডালপালা কেটে সরিয়ে নেন। শনিবার দুপুরেও গাছের ডালপালা সরিয়ে নিতে শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন। গগন শিরীষ গাছের বড় একটি ডাল ভেঙে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের স্টিলের সীমানার একটি কোণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঝড়ের কারণে প্যারিস রোডের পাশে কয়েক জায়গায় বিদ্যুৎ সঞ্চালনা লাইনের তার ছিঁড়ে যায়। এতে গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত টানা কয়েক ঘণ্টা পুরো ক্যাম্পাস বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। আজ শনিবার দুপুরে কর্মীদের বিদ্যুৎ সঞ্চালনা লাইনের তার ঠিক করতে দেখা যায়। তবে ঝড়বৃষ্টিতে ক্যাম্পাসের অন্যান্য অংশে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় ঝড় শেষে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানুসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা প্যারিস রোড পরিদর্শন করেন। তারা প্যারিস রোডের ওপরের গাছের ডালপালাগুলো সরিয়ে নিতে কর্মীদের নির্দেশনা দেন। পরে তারা উপাচার্য ভবনে একটি মিটিং করেন।
প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘ঝড়ের কারণে প্যারিস রোডের গাছগুলো বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্যাম্পাস বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এসব বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।’