রানা প্লাজার ভয়াবহতা থেকে 'ঘুরে দাঁড়ানোর ৬ বছর'
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলে ঘটে যাওয়া শতাব্দীর ভয়াবহতম ভবন বিপর্যয় সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৪ পোশাককর্মী নিহত হন। কেউ হারায় বাবাকে, কেউ হারায় মা কে। পরিবারের উপার্জন করা মানুষটি চলে যাওয়ার পর পরিবারে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্যোগ। অভাব অনটনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় অনেকের। এমন সময় তাঁদের পাশে দাঁড়ায় প্রথম আলো। গঠিত হয় মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে পুনর্বাসনের জন্য ১০১ জনের প্রত্যেককে দেওয়া হয় ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া রানা প্লাজায় নিহত ব্যক্তিদের ২০ জনের সন্তানদের শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হয়। গত ছয় বছরে এই সহায়তা পেয়ে অনেকেই পড়াশোনা করতে শুরু করে। এখন তাঁরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
যেসব মানুষ এই সহায়তা পাচ্ছেন তাঁদের নিয়ে প্রথম আলো ট্রাস্ট এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আজ শনিবার সিএ ভবনে প্রথম আলো মিলনায়তনে ‘ঘুরে দাঁড়ানোর ৬ বছর’ শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেন সহায়তা পাওয়া ব্যক্তিরা ও শিক্ষা বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা। তাঁরা শত বিপদের মধ্যে এই তহবিলের সহায়তা পেয়ে কীভাবে নিজেদের স্বপ্ন জিইয়ে রেখেছেন সেই কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ভালো করতে গেলে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে হবে। রানা প্লাজায় যারা বাবা-মা হারিয়েছেন, তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আমাদের সহায়তা চলতেই থাকবে। যত দূর পর্যন্ত তাঁরা পড়তে চায় তত দিন পর্যন্ত প্রথম আলো তাদের সঙ্গে থাকবে। পড়াশোনা শেষ না হওয়ার আগে অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়াশোনার ক্ষতি না করার আহ্বান জানান মতিউর রহমান।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কোনো দুর্ঘটনার পর দেখা যায় তাৎক্ষণিক সাহায্য অনেক আসে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে সাহায্য কমই দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম প্রথম আলো। সাভারের দুর্ঘটনায় আহত ও শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে প্রথম আলো উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বড় সহায়তার চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে সাহায্য বেশি জরুরি।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ বলেন, বাংলাদেশ মানবিক বিপর্যয়ের দেশ। মানুষ যেমন ক্ষতি করতে পারে, তেমনি মানুষ উপকারও করতে পারে। সাভারের দুর্ঘটনার পর মানবিক দিক তুলে ধরার পর আমরা তহবিল গঠন শুরু করেছিলাম। একটু টাকা দিয়েই সেই সহায়তা শেষ করতে চাইনি। পড়াশোনা বা জীবিকার জন্য কিছু করতে চেয়েছি। শেষ পর্যন্ত যেন তাঁরা স্বনির্ভর হয় তার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে থাকবে।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক লেখক আনিসুল হক বলেন, প্রথম আলো সব সময় আপনাদের খোঁজ খবর রাখে। প্রথম আলো আপনাদের জন্য যতটুকু করেছে যত্ন নিয়ে করেছে। প্রথম আলো শেষ পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে থাকবে। লড়াই চালিয়ে যান জয় আপনাদের হবেই।
প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন বলেন, শিশুদের যে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে এটা শেষ হবে না। শিক্ষা কেউ কেড়ে নিতে পারে না। তাই এটি অর্জন করতে হবে। এটা একটি দূরদর্শী সহায়তা। নগদ অর্থের চেয়ে শিক্ষাবৃত্তি অনেক বড় সহায়তা। এই শিক্ষাবৃত্তি অনেক শিশুর অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আজিজা আহমেদ সহায়তা তহবিলের নানা কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, মেরিল-প্রথম আলো সহায়তা তহবিল থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা বৃত্তি পাচ্ছে। এ ছাড়া এককালীন ১০০ জনকে এক লাখ করে এক কোটি ও একজনকে ৫০ হাজার টাকা পুনর্বাসনের জন্য দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, প্রথম আলো ট্রাস্টের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফেরদৌস ফয়সাল, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার নাজিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।