মেরামত হতে না হতেই ফাটল
গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে লামামেউহারী গ্রামের সামনের সড়কে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন গাছের ডালপালা ও পাতা দিয়ে সড়কের ফাটল ধরা অংশ চিহ্নিত করে রেখেছেন। সড়কের এই ফাটল ধরা অংশের কাছাকাছি এসে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী নামিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ওই অংশ অতিক্রম করছেন চালকেরা।
এ রকম এক যাত্রী লামামেউহারী গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মোতালিব বলেন, ‘আমি এই এলাহায় থাহি না। কয়দিন অইছে বাড়ি আইছি। চার–পাঁচ দিন ধইরাই সড়কের এই অবস্থা দেখতাছি।’
ঘুলুয়া গ্রামের বাসিন্দা কাজল মাহমুদ তালুকদার বলেন, এই সড়ক যখন কার্পেটিং ও মেরামত করা হয়, তখন যেনতেনভাবে তা করা হয়। ফলে মেরামতকাজ শেষ হওয়ার মাস তিনেক না যেতেই সড়কের একাংশে ফাটল ধরেছে। এলাকাবাসী কাজের শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলীকে কাজের মান ভালো হচ্ছে না বলে জানালেও কোনো লাভ হয়নি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের হলিদাকান্দা গ্রামের ইজিবাইকচালক বকুল মিয়া বলেন, ‘কয়দিন আগেই সড়কটার অবস্থা বারোডা বাইজা গ্যাছে। মনে অয়, দেহনের কেউ নাইগা। সড়কের ফাটলের কিনার দিয়া গাড়ি লইয়া গেলে জানডা ধড়ফড় কইরা উডে। দেরি না কইরা তাড়াতাড়ি এইডা ঠিক করন দরহার।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির) উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, টানমেউহারী গ্রামের সামনের সড়ক থেকে উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ঘুলুয়া কদমতলা বাজার পর্যন্ত সড়কটির দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। এলজিইডির অধীনে ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ১৭৭ টাকা ব্যয়ে সড়কটি কার্পেটিংসহ মেরামত করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে এই কাজ পান এমদাদুল হক নামের এক ঠিকাদার। তিনি গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সড়কটি মেরামত শুরু করেন। এর মধ্যে এক কিলোমিটার সড়কে কার্পেটিং এবং বাকি এক কিলোমিটার মেরামত করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ঠিকাদারের কাজ শেষ হয়।
সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘এই সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেলা সদরে যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। এ ছাড়া এখানকার তিনটি ইউনিয়নের মানুষজনকেই সড়কটির ওপর দিয়ে উপজেলা সদরে আসা-যাওয়া করতে হয়। সড়কটিতে ফাটল ধরার বিষয়টি আমি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছি।’
ঠিকাদার এমদাদুল হক বলেন, ‘সড়ক মেরামতকাজে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। যেটুকু কাজ করার কথা, সেটুকুই করেছি।’
এলজিইডি কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী ও কাজের তদারক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম মুনশি বলেন, সড়ক মেরামতকাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। এই সড়ক লাগোয়া কংস নদ রয়েছে। সরকারিভাবে তিন-চার বছর আগে এই নদের খননকাজ করা হয়। নদটি খননের কারণে এই সড়কের প্রায় ১২০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। সড়কের যে স্থানটুকুতে এখন ফাটল দেখা দিয়েছে, সেটুকু সড়ক মেরামতের তালিকায় ধরা ছিল না। ঠিকাদার এটুকু অংশের অতিরিক্ত কাজ করেছেন। নদী খননের কারণেই সড়কটির এই অংশে ফাটল ধরেছে বলে মনে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘সড়কটির এ অবস্থার কথা আমাকে কেউ জানায়নি। এমনটি হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে এ সমস্যা সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা সড়কটির এই দুরবস্থার কথা আমাকে জানিয়েছেন। উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’