শ্রীলঙ্কায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিরাপদে
শ্রীলঙ্কায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা যত দূর সম্ভব শ্রীলঙ্কায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছি।’
দায়িত্বশীল সরকারি সূত্র শ্রীলঙ্কায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা ‘কয়েক শ’ হবে বলে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশি পরিবারগুলোকে হাইকমিশনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সময়ে সময়ে তাঁদের কাছে মুঠোফোনে বা ই–মেইলে বার্তা যাচ্ছে। হাইকমিশন হামলার পর অন্তত ২৫ বাংলাদেশির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে।
বাংলাদেশি এক বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী দেশে ফিরতে চাইলে তাঁকে দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে হাইকমিশন। কলম্বো থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরবর্তী ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই ছাত্রী অন্তত দু–তিন সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে ফেরার ধারণা পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
২১ এপ্রিলের ইস্টার সানডে হামলায় আত্মঘাতীদের একজনের মালিকানাধীন তামা কারখানায় কর্মরত ১১ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের পর ঢাকায় তাঁরা স্বাভাবিক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন। তাঁরা এখন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) হেফাজতে আছেন।
জানা গেছে, কলম্বোর উপকণ্ঠ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের ওই তামা কারখানায় কর্মরতদের মধ্যে ১১ বাংলাদেশি, ৩৪ ভারতীয় ও ১৬ শ্রীলঙ্কান ছিলেন।
২৪ এপ্রিল কলম্বো ডেটলাইনে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৩ বছর বয়স্ক ওই তামা কারখানার মালিক ইনসাফ ইব্রাহিম বিলাসবহুল সাংরি-লা হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটান। পরে ওই দিনই পুলিশ ইব্রাহিমদের বাড়িতে অভিযান চালাতে গেলে তাঁরই ছোট ভাই ইলহাম ইব্রাহিম বোমা ফাটান। এতে তিনি, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের তিন সন্তানের মৃত্যু ঘটে।
স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে রয়টার্স ওই প্রতিবেদনে বলেছে, শ্রীলঙ্কার ধনাঢ্য মসলা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইবরাহিম নগরে একজন দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দুই সন্তান যে এত বড় সন্ত্রাসে যুক্ত হতে পারে, তা ছিল অভাবনীয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৩১ বছর বয়সী ইলহাম প্রকাশ্যে উগ্রপন্থী মতাদর্শ প্রচার করতেন। হামলাকারী সংগঠন হিসেবে সন্দেহভাজন ন্যাশনাল তৌহিদ জামায়াতের (এনটিজে) সভাগুলোতে তাঁকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। তাঁর ওই তামা কারখানার মালিক ভাই ইনসাফ কারখানার শ্রমিক ও এলাকাবাসীর কাছে একজন উদারনৈতিক ও দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইনসাফ এক ধনাঢ্য স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর টাকাপয়সার অভাব ছিল না।
রয়টার্সের এই প্রতিবেদনটিতেই প্রথম প্রকাশ পায় যে বাংলাদেশিরা ওই কারখানায় কর্মরত ছিলেন। সারওয়ার নামের একজন বাংলাদেশি শ্রমিক রয়টার্সকে ইনসাফ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তিনি অনেক মালিকের মতো রূঢ় নন, দয়ালু ছিলেন। আমি তাঁর জন্য কাজ করতে পেরে খুশি ছিলাম। তিনি চলে গেছেন। আমি এখন কী করি?’
দায়িত্বশীল সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশে প্রত্যাগত ১১ বাংলাদেশির মধ্যে ওই সারওয়ার রয়েছেন।
১১ জনের মধ্যে টাঙ্গাইলের ৮ জন, মাগুরার ২ জন এবং কুষ্টিয়ার ১ জন। এর মধ্যে ৯ জনই পর্যটক ভিসায় শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন। বাকি ২ জন চাকরি ভিসায় যান। ৩ বছর ধরে ৯ জন অবৈধ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। ঢাকায় ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ৯ জনের জন্য ট্রাভেল পারমিট জারি করে। বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছাতে তাঁরা দালালকে গড়ে দুই লাখ টাকা করে টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই কারখানায় তাঁদের বেতন ছিল লক্ষণীয়ভাবে কম। হাইকমিশন কর্মকর্তাদের তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশি টাকায় তাঁদের মাসিক বেতন ছিল মাত্র ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা।
২৪ এপ্রিল ওই তামার কারখানা পরিদর্শন করেছেন ব্রিটেনের টিভি চ্যানেলের এশীয় সংবাদদাতা মিজ দেবী এডওয়ার্ড। আইটিভিতে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেবী বলেন, জল্পনা রয়েছে যে এই কারখানাটিতেই হামলকারীদের ব্যবহৃত সুইসাইড ভেস্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে চারপাশে আমি যেসব উপকরণ দেখতে পাচ্ছি, তা দিয়ে সহজেই বোমা বানানো সম্ভব।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বাংলাদেশ হাইকমিশন ই-মেইল ও মুঠোফোনে গত রোববার হামলার পর এবং শুক্রবার দুটি পৃথক বার্তা প্রকাশ করে। এতে বাসাবাড়িতে অবস্থান, কর্মস্থলে বা কেনাকাটার জন্য যাতায়াতে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ওই বার্তায়, এমনকি শুক্রবার জুমার নামাজে না যেতেও প্রকারন্তরে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। বার্তায় বলা হয়, শ্রীলঙ্কা সরকার আজ জুমাবারে মসজিদ এড়াতে যে ‘অনুরোধ’ করেছে, বাংলাদেশ হাইকমিশন তা পুনর্ব্যক্ত করছে।